ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে ২৮৮ বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। ভোট শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ৭টায়, চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
এই রাজ্যটিতে মোট ভোটারের সংখ্যা ৯ কোটি ৬৩ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪ কোটি ৯৭ লাখ, নারী ভোটার ৪ কোটি ৬৬ লাখ। মোট ৪ হাজার ১৩৬ প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হবে এই নির্বাচনে। ভোট প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ও অবাধ করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে এদিন নজর ছিল ভারতের টিনসেল টাউন বলে পরিচিত মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাই-এর দিকে। বাণিজ্য নগরী মুম্বাইতেই বসবাস বলিউডের সেলিব্রিটি, শিল্পপতিসহ একাধিক বিশিষ্ট মানুষের।
এদিন সকালেই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে দেখা যায় অভিনেতা অক্ষয় কুমারকে। পরে ভোটের ছাপ দেওয়া আঙ্গুলটি গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন। সেই সাথে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আহ্বান জানান এই বলিউড অভিনেতা।
এছাড়াও বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে দেখা যায় রাবিনা ট্যান্ডন, মাধুরী দীক্ষিত, সোনালী বেন্দ্রে, সোহেল খান, রাজকুমার রাও, অনুপম খের, জন আব্রাহাম, অর্জন কাপুর, রণবীর সিং, দীপিকা পাড়ুকোন, সোনু সুদ, সুনীল শেট্টি, টিনা দত্ত, রণবীর কাপুর, আলিয়া ভাট, গৌতমি কাপুর, উর্মিলা মার্তন্ডকার, রেনুকা সাহানে, পরিচালক কবির খান, ফারহান আখতার, জোয়া আখতার, আরবাজ খান, পূজা ভাট, নিকিতা দত্ত, তুষার কাপুর, টুইংকেল খান্না, আয়াজ খান, কার্তিক আরিয়ান, অভিনেতা ও শিবসেনা নেতা গোবিন্দা আহুজা, আমিরপুত্র অভিনেতা জুনাইদ খান, পরিচালক সুভাষ ঘাই, অভিনেতা ও বিজেপি নেতা পরেশ রাওয়াল, বোমান ইরানি, সান্তনু মাহেশ্বরী, রূপালী গাঙ্গুলী, দীপিকা চিকলিয়া, আমির খানের সাবেক স্ত্রী রিনা দত্ত, বলিউডের সিনিয়র অভিনেত্রী শুভা খোটে, পরিচালক রাকেশ রোশন, সিনিয়র অভিনেতা প্রেম চোপড়া, সংগীত শিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল, কৈলাস খের, রাহুল বৈদ্য, সংগীত পরিচালক ও গায়ক বিশাল দাদলানি, কবি ও সুরকার জাবেদ আখতারকে।
পরিচালক কন্যা মেঘনা গুলজারকে সাথে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসেন প্রখ্যাত সুরকার গুলজার। অভিনেত্রী ও বিজেপি সাংসদ হেমা মালিনীর সাথেই ভোটকেন্দ্রে দেখা যায় কন্যা এষা দেওয়ালকে। পরিবারের সদস্যদের সাথে ভোট দিতে দেখা যায় অভিনেত্রী শ্রদ্ধা কাপুরকেও। ভোট দেন সেলিব্রেটি দম্পতি সাইফ আলী খান ও কারিনা কাপুর, রাকুল প্রীত সিং ও জ্যাকি ভাগনানি, রীতেশ দেশমুখ ও জেনেলিয়া ডিসুজা। ভোট দেন সালমান খানের বাবা-মা সেলিম খান এবং সালমা খান।
স্ত্রী অঞ্জলি এবং কন্যা সারাকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার, স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ভোট দেন ক্রিকেটার আজিংকা রাহানে। পরে ভোট কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষারত গণমাধ্যমের কর্মীদের সামনে নিজের আঙ্গুলের ছাপ দেখান। ভোট দেওয়ার পর এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সাথে একই ফ্রেমে দেখা যায় অভিনেত্রী সোহা আলী খানকে। সেলিব্রিটিদের কাছে পেয়ে অনেক সাধারণ মানুষই তাদের সাথে সেলফি তোলেন। কেউ কেউ আবার নিজে থেকেই ভক্তদের ভিড়ে মিশে গিয়ে ছবি তুলতে সহায়তা করেন।
বিকালের দিকে ভোট দিতে আসেন খুনের হুমকি পাওয়া বলিউড অভিনেতা সালমান খান। সম্প্রতি ভারতীয় গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে খুনের হুমকি পেয়েছিলেন অভিনেতা সালমান খান। ফলে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেই বিকাল সাড়ে চারটার দিকে বান্দ্রা ওয়েস্টে একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন সাল্লু মিয়া।
এছাড়াও পুত্র আকাশ ও অনন্ত আম্বানিকে সাথে নিয়ে ভোট দেন শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি, টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন, মাহিন্দ্রা গ্রুপের চেয়ারম্যান আনন্দ মাহিন্দ্রা, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরবিআই-এ গভর্নর শক্তিকান্ত দাস, মহারাষ্ট্রের প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা এস চকালিঙ্গম প্রমুখ।
একঝাঁক রাজনীতিবিদও এদিন তাদের নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এদের মধ্যে অন্যতম মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, উপমুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি প্রার্থী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ, শিবসেনা নেতা এবং মহারাষ্ট্র সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে এবং তার পুত্র আদিত্য ঠাকরে, কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়করি, এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার, কেন্দ্রীয় শিল্প, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গয়াল প্রমুখ।
বর্তমানে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় রয়েছে একনাথ শিন্ডে নেতৃত্বাধীন মহাহুতি জোট সরকার। এই জোটের অন্য শরিক দলগুলো হল- বিজেপি এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী)। ২৮৮ আসনের মধ্যে বিজেপি ১৪৯টি আসনে লড়াই করছে, শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠী) ৮১ আসনে এবং এনসিপি (অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী) ৫৯ আসনে লড়াই করছে।
অন্যদিকে ‘মহা বিকাশ আঘারী (এমভিএ)’ নামক বিরোধী দলের জোটে রয়েছে কংগ্রেস, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (শারদ পাওয়ার গোষ্ঠী)। কংগ্রেস ১০১ আসনে প্রার্থী দিয়েছে, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) ৯৫ আসনে এবং এনসিপি (শারদ পাওয়ার গোষ্ঠী) ৮৬ আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
গত ২০১৯ সালে জোট গঠন করে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করেছিল বিজেপি এবং অবিভক্ত শিবসেনা। ওই নির্বাচনে ১০৫ আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি, ৫৬ আসনে জয় পায় শিবসেনা, কংগ্রেস ৪৪ এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) ৫৬ আসনে জয় পেয়েছিল।
অন্যদিকে ঝাড়খন্ডে ৮১টি বিধানসভা আসনের মধ্যে আজ দ্বিতীয়/শেষ দফায় ভোট নেওয়া হচ্ছে ৩৮ আসনে। প্রথম দফায় ১৩ নভেম্বর ৪৩ আসনে ভোট নেওয়া হয়। সকাল ৭ টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়, তা শেষ হয় বিকাল ৫ টায়।
এই রাজ্যটিতে মোট ৫২৮ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হবে এর মধ্যে অন্যতম ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, তার স্ত্রী কল্পনা সোরেন প্রমুখ।
এই রাজ্যটিতে জোট সরকারে রয়েছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম), কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)।
অন্যদিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) এর অন্য শরিক দলগুলো হলো- জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ), অল ঝাড়খন্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এজেএসইউ)।
শেষবার ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৮১ আসনের মধ্যে জেএমএম ৩০ টি আসনে জয় পেয়েছিল, বিজেপি জয় পেয়েছিল ২৫টি আসনে। ভোটের পর জেএমএম, কংগ্রেস এবং আরজেডি জোট গঠন করে সরকারে আসে। তাদের সম্মিলিত আসন সংখ্যা ছিল ৪৭।
এদিন ভোট শুরুর আগেই মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খন্ডের ভোটারদের, বিশেষ করে নারী ও যুব সমাজকে নিজেদের ভোট প্রদানের জন্য ভোট কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দুই রাজ্যেই ভোট গণনা আগামী ২৩ নভেম্বর। ওইদিন দেশটির বেশ কয়েকটি লোকসভা ও বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেরও ফলাফল ঘোষিত হবে।
বিডি প্রতিদিন/একেএ