প্রথমে বাজেট নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পরে সেই বাজেট বাড়িয়ে করা হয় ৭ লাখ টাকা। বাজেটের বাড়তি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রায় পুরোটাই চুরি করা হয়েছে। ঘটনাটি বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)-এর। মুজিববর্ষ উপলক্ষে একটি বই প্রকাশ করতে গিয়ে ওই টাকা চুরি হয়। এর আগে বইটি নিয়ে বিএসসিএলের বোর্ড সভায় আলোচনাও হয়। সেখানে বাজেট নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। প্রাথমিকভাবে ৫০০ ও ২ হাজার কপি ছাপানোর পরিকল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ১ হাজার কপি ছাপানোর সিদ্ধান্ত হয়। বইয়ের সংখ্যা কমিয়ে ছাপানোর যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বইটি নতুন এবং স্যাটেলাইট বিষয়ে সবার আগ্রহ নাও থাকতে পারে। ২০২২ সালের ১৬ জুন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ৪৭তম বৈঠকে বইটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে বিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জহিরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওই সময় নানা ধরনের অনিয়ম হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে এর কিছু বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। একই প্রসঙ্গে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হামেদ হাসান মুহাম্মদ মহিউদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বই ছাপানোর পুরো বিষয়টি ওইসময় দায়িত্বে থাকা বিএসসিএলের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন বোর্ডের সদস্যরা। এ নিয়ে আমাদের কোনো কাজ ছিল না। বইটি বিএসসিএল আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুঁজলে এক বা ২ কপি হয়তো পাওয়া যেতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সাড়ে ৪ লাখ টাকার মধ্যেই বইটি ছাপানো হয়েছে। এমনকি ১ হাজার কপিও ছাপানো হয়নি। সবমিলিয়ে আড়াই লাখ টাকার মতো আত্মসাৎ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রকাশনার সবকিছু কোম্পানির ওয়েবসাইটে দেওয়ার কথা। কিন্তু বইটি ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়নি। এদিকে ৭ নভেম্বর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম জানিয়েছেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে জনগণের অর্থ অপচয় হয়েছে। মুজিববর্ষ ঘিরে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল, তা সবার জানা আছে। মুজিববর্ষে কী ধরনের কাজ হয়েছে এবং কত টাকার অপচয় হয়েছে, তা নিয়ে ডকুমেন্টেশন করার আলোচনা ক্যাবিনেটে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মুজিববর্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কত কোটি টাকা খরচ করেছে, তা নিয়ে ডকুমেন্ট তৈরি করা হবে। কোন মন্ত্রণালয় কী খাতে কত টাকা অপচয় করেছে, তার একটি তালিকা তৈরি করা হবে।
বই নিয়ে যে আলোচনা হয় বোর্ড সভায় : বোর্ড সভায় বইটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রথমে বইয়ের প্রথম ডামি তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, বইয়ের আকৃতি হবে ৬ ইঞ্চি বাই ৯ ইঞ্চি। পৃষ্ঠা সংখ্যা হবে ১৯২,পৃষ্ঠার পুরুত্ব হবে ১২০ গ্রাম ও ফর্মা সংখ্যা হবে ১২ ফর্মা (১৬ পৃষ্ঠায় ফর্মা)। এ জন্য মোট ব্যয় হবে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাজেট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে পরে ৭ লাখ টাকা করা হয়। সেখানে বইটির নতুন ডামি করা হয়। সেখানে বলা হয়, বইয়ের নতুন আকৃতি হবে ৬ দশমিক ৫ ইঞ্চি বাই ৯ দশমিক ৫ ইঞ্চি, পৃষ্ঠা সংখ্যা হবে ২০৮, পৃষ্ঠার পুরুত্ব হবে ১৫০ গ্রাম ও ফর্মা সংখ্যা হবে ২৬ ফর্মা (৮ পৃষ্ঠায় ফর্মা)। বোর্ড সভায় বইয়ের নতুন আকৃতির ডামিকেই সবচেয়ে উপযুক্ত বলে বিবেচনা হয়। এ নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে- বই নিয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের উপস্থাপনা শেষে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক মাহবুব-উল-আলম বলেন, লাইব্রেরিতে বিভিন্ন আকৃতির বই রাখা হয়। বর্তমানে যে আকৃতির বই উপস্থাপন করা হয়েছে সেটিই স্টান্ডার্ড। এ পর্যায়ে আরেক পরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২ হাজার বই ছাপানো হলে হয়তো খরচ কমে আসত। তিনি বলেন, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিএসসিএলের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা যেতে পারে। এই পর্যায়ে খরচ কমাতে বইয়ের সংখ্যা কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে এ সময় জানা যায়, বইয়ের কপি কমিয়ে ৫০০ করা হলেও সম্ভাব্য খরচ ৫ লাখ টাকার কম হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ পর্যায়ে মাহবুব-উল-আলম বলেন, আপাতত ১ হাজার বই ছাপানো হোক। কারণ বইটি নতুন এবং স্যাটেলাইট বিষয়ে সবার আগ্রহ নাও থাকতে পারে।