অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ‘আপনারা জানেন এই যে ফ্যাসিবাদী সিস্টেম গড়ে উঠেছে তা ২০০৭ বা ২০০৮ সালের পর থেকে গড়ে ওঠা। তবে এর গোড়াপত্তন হয়েছিল সেই ১৯৭২ সালেই। তারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বেইমানি করেছে।’ গতকাল শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের অডিটোরিয়ামে ‘কী চাই নতুন বাংলাদেশে’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ চাই। ১৯৭১ সালেও যে ৩টি উদ্দেশ্য সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তার মধ্যে ছিল সাম্য, ন্যায় ও মর্যাদাভিত্তিক রাষ্ট্র। কিন্তু ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচনা করা হলো সেখানে এ বিষয়গুলো অনুপস্থিত ছিল। আপনারা জানেন এই যে ফ্যাসিবাদী সিস্টম গড়ে উঠেছে তা ২০০৭ বা ২০০৮ সালের পর থেকে গড়ে ওঠা। তবে এর গোড়াপত্তন হয়েছিল সেই ১৯৭২ সালেই। তারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বেইমানি করেছে। এটি নিয়ে আমি একটি বই সম্পাদনা করেছি, যার নাম হচ্ছে- বেহাত বিপ্লব ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার জন্য তরুণ সমাজকে তিনি আহমদ ছফার বই পড়ার পরামর্শ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি যে ভূমিকা রেখেছিল সেজন্য তাদের বিচার হওয়া উচিত। তারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। শুধু তাই নয়, নির্লজ্জ প্রেস রিলিজও দিয়েছিল। কিন্তু এর পরও তারা স্বাভাবিকভাবেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত এদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ আসমান থেকে নাজিল হয়নি, আমাদের মধ্য থেকেই তৈরি হয়েছে। সরকার যদি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে না পারে তাহলে তার বসার যোগ্যতা নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বাংলাদেশকে একটি সাম্যের রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাই স্মৃতি শহীদ ফাউন্ডেশন’ করা হয়েছে। যারা আহত হয়েছেন তাদের জন্য আমরা একটি ওয়েবসাইট করেছি। ওয়েবসাইটে কিন্তু আমরা পুরো লিখে দিয়েছি কারা কোথায় কীভাবে আহত হয়েছেন। পুরো লিস্ট আছে। যারা আহত হয়েছে তাদের লিস্ট আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাবল কাউন্টিং হয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে ঢাকা মেডিকেলে একজন যেই নামে লিপিবদ্ধ হয়েছেন গ্রামেও সেই নামে লিপিবদ্ধ হয়েছেন। যেসব শহীদের নাম এসেছে তাদের আমরা নিখুঁতভাবে খুঁজে বের করেছি। ফলে একটু দেরি হয়ে গেছে।
ফ্যাসিবাদী দলগুলোর বিচার হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আর যাদের হাতে রক্ত আছে, যারা এই ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে তাদের আগে বিচার করতে হবে। না হলে আমরা এ ইতিহাসকে ধারণ করতে পারব না। তাদের (শহীদদের) সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। এদের (আওয়ামী লীগ) মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই, বরং ওরা একটা বড় গল্প নিয়ে আসছে ৩ হাজার পুলিশ মারা গেছে তাই আমরা এগুলো করেছি। এটাতেই তারা এই যে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেগুলোকে মেরেছে সেটার বৈধতা দিচ্ছে। এ জায়গায় কোনো ধরনের ছাড় হবে না, এদের বিচার হবেই। যার হাতে রক্ত আছে তার আগে বিচার করতে হবে।
ব্যানার নিউজ ফোরামের আয়োজনে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, লেখক ও গবেষক ড. মোবাশ্বার হাসান, শিল্পী নওশাবা আহমেদ, মায়ের ডাক সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি, জুলাই বিপ্লবে শহীদ পরিবারের সদস্য ও ব্যানার নিউজের সাংবাদিকবৃন্দ।