বিএনপির ঘাঁটি বলে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বগুড়া বিমানবন্দর চালুর সবুজসংকেত বন্দি হয়ে আছে লাল ফাইলে। নির্মাণের ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও উড়ছে না বাণিজ্যিকভাবে বিমান। যাত্রী, একাধিক ফোর স্টার হোটেল, মোটেল, পর্যটন কেন্দ্র, চিকিৎসাকেন্দ্রসহ বাণিজ্যিকভাবে সব রকম সম্ভাবনা থাকার পরেও বিমান ওড়ার কোনো খবর নেই। ক্ষমতার পট পরিবর্তনে এবার বগুড়াবাসী বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালু করার দাবি জানিয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বাণিজ্যিকভাবে দিনদিন প্রসার বাড়ছে বগুড়ার। উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে রংপুর, গাইবান্ধা, নাটোর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার বাণিজ্যিক বিষয়াদি আগের থেকে বেড়েছে। যে কারণে বগুড়ার ব্যবসায়ীদের ঢাকা এবং চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। সময়মতো অনেক কিছুই মেলে না বলে বগুড়া পিছিয়ে যাচ্ছে ব্যবসাবাণিজ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে। বগুড়ার ব্যবসাবাণিজ্যকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে ১৯৮৭ সালে বগুড়ায় বিমানবন্দর নির্মাণের প্রথম আলোচনা শুরু হয়। এরপর ১৯৯৫-৯৬ সালে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়ায় বগুড়া স্টল বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। বগুড়া সদরের এরুলিয়া মৌজায় ১০৯ দশমিক ৮১ একর ভূমি হুকুম দখল করে কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৯৯৫ সালে জমি কিনতে ব্যয় ধরা হয় ২৮ লাখ টাকা। প্রকল্পে ছিল ৫ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬০০ ফুট প্রস্থ রানওয়ে নির্মাণ, অফিস ভবন নির্মাণ, মূল গ্রাউন্ড নির্মাণ, কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে প্রথমে নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০০০ সালে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার আশা করা হয়। সে হিসেবে ২০০১ সালের শুরুতে বগুড়ার আকাশে বিমান উড়বে বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিমান উড়বে উড়বে করেও আর ওড়েনি। বগুড়াবাসীর বহু আশার বিমানবন্দরও বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে লোকসানের আশঙ্কায় সরকারিভাবে বিমান সার্ভিস চালু করা হয়নি। নির্মাণের পর থেকেই বগুড়াবাসী বিমান চালু করার দাবি জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর বগুড়ায় বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু করার বিষয়ে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি দল বগুড়া বিমানবন্দরের প্রাথমিক বিষয়গুলো পরিদর্শন করে।
প্রাথমিকভাবে পরিদর্শনে বিমানবন্দর চালু করতে কী কী প্রয়োজন হতে পারে, সে বিষয়টি নিয়েও কাজ করা হয়। তারপরও বিমানবন্দর চালু ও বাণিজ্যিকভাবে বিমান ওড়েনি। রাজনীতিবিদ ও শিল্পপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকারের আমলে বগুড়া বিমানবন্দর স্থাপনে ২২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পায়। পরবর্তী সময়ে অন্য সরকার ক্ষমতায় গেলেও বিমানবন্দর নির্মাণের সব কাজ শেষ হয়। ২০০০ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও নানা কারণে শেষ পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে বগুড়ার আকাশে বিমান ডানা মেলেনি। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় তাই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার কোনো উন্নয়ন করেনি। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর আশার আলো দেখছে বগুড়াবাসী। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিমানবন্দর চালু হলে বদলে যাবে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি। যোগাযোগে উন্মোচিত হবে নবদিগন্ত। শিল্পনগরীখ্যাত বগুড়ায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে, পাশাপাশি স্বল্পসময়ে যাতায়াত এবং উৎপাদিত পণ্য সহজে পৌঁছে যাবে দেশবিদেশে।
বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় সংসদে একাধিকবার এ নিয়ে কথা বলা হয়েছে। বিমানবন্দরের রানওয়ের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে এলাকার মানুষও রাজি। বিভিন্ন সময়ে দাবি জানালেও শুধু বিএনপির এলাকা হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার হয়ে আলোর মুখ দেখেনি বিমানবন্দর।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জেলা হওয়ার কারণে এই বগুড়া উন্নয়নবঞ্চিত হয়েছে। নতুন সরকার নিশ্চয়ই বিমানবন্দর চালু করতে উদ্যোগ নেবে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। বিমানবন্দর চালু হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প ব্যবসাবাণিজ্য, ক্রীড়া সবদিক থেকেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে।