ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচির মৃত্যুর ঘটনায় ক্যাম্পাসে দিনভর বিক্ষোভ করেছেন তার সহপাঠীরা। আট দফা দাবিতে বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো ফটকে তালা ঝুলিয়ে ‘জাহাঙ্গীরনগর ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
আফসানা নিহতের ঘটনায় দিনব্যাপী নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম ও পরীক্ষা বন্ধ রেখে শোক দিবস পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নিহত আফসানার রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এ দিন সকাল-সন্ধ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধ-নমিত ছিল।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই কাঠামোগত হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার করা; পর্যাপ্ত সড়কবাতি, ফুটপাথ ও গতিরোধক স্থাপন করতে হবে এবং যানবাহনে গতি পরিমাপক রাখা; নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারকে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া; মেডিকেল সেন্টারের জরুরি সেবার মানোন্নয়ন করা; নিবন্ধনহীন সব যানবাহন ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা ও নিবন্ধন প্রদানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে; সব রিকশাচালকের প্রশিক্ষণপূর্বক নিবন্ধন নিশ্চিত করা; অদক্ষ নিরাপত্তাকর্মীদের প্রত্যাহার করা ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল করাসহ ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আফসানা রাচির অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে আমরা ৫৩তম ব্যাচসহ জাবির সব শিক্ষার্থী গভীরভাবে শোকাহত। আজ আফসানা, কাল হয়ত অন্য কারো সঙ্গে এমনটা ঘটতে পারে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনুন এবং আমাদের সবগুলো দাবি বাস্তবায়ন করুন।
এর আগে, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে আফসানার মৃত্যুর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঘাতক চালকের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ একাধিক দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা মিছিল নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের আবাসিক বাসার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে কয়েক ঘণ্টা অবস্থানের পর দাবিগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে উপাচার্যের আশ্বাসের পর হলে ফিরে যান তারা।
এদিকে, আফসানা করিমের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দায়িত্ব পালনে অবহেলার দায় দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডেপুটি রেজিস্ট্রারসহ চার জনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সাময়িক বরখাস্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (এস্টেট) আবদুর রহমান বাবুল, নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাসেল মিয়া, সহকারী সুপারভাইজার আব্দুস সালাম ও ডিউটি গার্ড মনসুর রহমান প্রামাণিক। তাদের মধ্যে এস্টেট অফিসের ডেপুটি-রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমানের স্থলে পরিবহন অফিসের উপ-রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আবুল কাশেমকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার থেকে মোটরচালিত যান বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত শাটল বাস সার্ভিস চালুর ঘোষণা করেছে জাবি কর্তৃপক্ষ। তবে, শাটল বাস চালুকে সাময়িক সমাধান হিসেবে দেখছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, নিরাপদ ক্যাম্পাস বিনির্মাণে প্রশাসনকে স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
সার্বিক বিষয়ে জাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দেওয়া আট দফাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। আমাদের এ বিষয়ে চাপ দেওয়ার কিছু নেই, আমরা নিজেরাই চাপ অনুভব করছি। আমাদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব, ততটুকু আমরা করার চেষ্টা করছি।
বিডি প্রতিদিন/ইই