আসন্ন নির্বাচনে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই বলে ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এটা এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। বিএনপি এটা করেছে। বলেছে, সব রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। সুতরাং তারা এরই মধ্যে রায় দিয়ে দিয়েছে। আমরা দেশের একটি প্রধান দলের মতামতকে উপেক্ষা করতে পারি না।’ তখন দ্য হিন্দুর সাংবাদিক জানতে চান, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কোনো আপত্তি আছে কি না- জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক নেতা নই যে কোনো একটি দল বা আরেকটি দলকে বেছে নেব। আমি শুধু রাজনীতিবিদদের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করার চেষ্টা করছি।’ ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে ঢাকার যমুনায় তাঁর সরকারি বাসভবনে ওই সাক্ষাৎকার দেন। এ সময় তিনি বলেন, ১০০ দিনে তিনি অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করেছেন। অন্যদিকে হিন্দুদের ওপর হামলার বিষয়টিকে প্রপাগান্ডা বা অপপ্রচার বলে অভিহিত করেন। এই সাক্ষাৎকারে তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের কাছে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ। তাকে ফেরত আনতে আইনি ব্যবস্থ নেওয়া হবে। ভারত যদি এক্ষেত্রে প্রত্যর্পণবিষয়ক চুক্তির রাজনৈতিক ধারা ব্যবহার করে তাহলে আমাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি করবে না।’ যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে দেওয়া বিবৃতি এবং ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে কোনো বিবৃতি দেননি।’ তখন হিন্দুর সাংবাদিক জানান বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্প বিবৃতি দিয়েছেন। এর জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘সম্ভবত ট্রাম্প সঠিকভাবে অবগত নন। এটা অপপ্রচার, যা বিশ্বজুড়ে চলছে। কিন্তু যখন তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বাস্তবতা সম্পর্কে জানবেন, তখন ট্রাম্প অবাক হবেন যে তাকে কতটা ভিন্নভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানানো হয়েছে।’ দ্বিপক্ষীয় স¤পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না শুধু যুক্তরাষ্ট্রে একজন নতুন প্রেসিডেন্টের কারণে সবকিছু বদলে যাবে। পররাষ্ট্রনীতি ও দেশের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক প্রেসিডেন্ট পদে পরিবর্তনের কারণে সাধারণত পরিবর্তিত হয় না। তাছাড়া ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যদি পরিবর্তন হয়ও তাহলে আমাদের মনে রাখতে হবে যে এটাও বাংলাদেশ ২; যেটাকে আমরা বলছি নতুন বাংলাদেশ।’ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অপেক্ষা করবে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা আসেন ও দেখেন এবং যদি আমাদের অর্থনীতি ভালো করতে থাকে তাহলে তারা আগ্রহী হবে।
প্রথমবার সচিবালয়ে আজ অফিস করবেন প্রধান উপদেষ্টা : ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন সচিবালয়ে অফিস করে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকও করবেন। আজ সকাল ১১টায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনে মন্ত্রিসভার কক্ষ ও প্রধান উপদেষ্টার অফিস কক্ষ রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অন্যান্য উপদেষ্টাদের নিয়ে এই ভবনে বৈঠক করবেন। ইতোমধ্যেই মন্ত্রিপরিষদ সচিব এই ভবনের মন্ত্রিসভার কক্ষ ও প্রধান উপদেষ্টার অফিস কক্ষ পরিদর্শন করেছেন। বৈঠক উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে মন্ত্রিসভা বিভাগ। সচিবালয়েও বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর শুরুতে সরকারি বাসভবন যমুনায় উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠক হলেও পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় তেজগাঁওয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সরকার প্রধান তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে সপ্তাহে এক দিন সচিবালয়ে বৈঠক করেন। গত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ সর্বশেষ সচিবালয়ে অফিস করেছিলেন। এর পর থেকে সরকার প্রধান হিসেবে আর কেউ সচিবালয়ে অফিস করেনি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সে উদ্যোগও নেওয়া হলো।