দেশে অবৈধভাবে ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন স্যাটেলাইট ফোন। এতে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদেশ থেকে তথ্য লুকিয়ে এসব ফোন দেশে আনা হচ্ছে। কারণ ব্যক্তিপর্যায়ে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে স্যাটেলাইট ফোন ট্র্যাকিংয়ের কোনো যন্ত্রপাতি না থাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে না। অবশ্য ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এর গোয়েন্দা প্ল্যাটফরমে স্যাট ফোন মনিটরিংয়ে স্যাটেলাইট ফোন ইন্টারসেপশন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা কোন স্যাট ফোন জব্দ করেছে এমন নজির নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকটি স্যাটেলাইট ফোন আটক করে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে সেগুলো জব্দ করে বিটিআরসি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের অনেক ভিআইপি হিসেবে খ্যাত ব্যক্তিদের কাছে স্যাট ফোন রয়েছে। বিটিআরসি থেকে এসবের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা বিশেষ করে দেশের তিন পার্বত্য জেলায় তৎপর অপরাধগোষ্ঠীদের হাতে স্যাট ফোন রয়েছে। তারা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের কাজে ব্যবহার করে। পার্বত্য জেলা নিয়ে কাজ করে এমন গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য জানান, বিভিন্ন অভিযানে তারা কয়েকটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করেছেন। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে চট্টগ্রামে র্যাবের একটি অভিযানে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানান, ওয়ান-ইলেভেনের সময় সেনাবাহিনীর অভিযানে শীর্ষ এক রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে স্যাটেলাইট ফোন পাওয়া যায়। পরে সেটা বিটিআরসি জব্দ করে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, চাদ, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সুদান এবং পাকিস্তানেও স্যাটেলাইট ফোন এবং ডিভাইসগুলো অবৈধ বা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু বাংলাদেশে আইন অমান্য করেই এসব ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের অনেক ভিআইপি এবং সিআইপি ব্যবসায়ী এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেককেই এ ধরনের মুঠোফোন ব্যবহার করতে দেখা যায়। বিশেষ করে জুলাই ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় সারা দেশে যখন ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয় তখন স্বয়ং ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহার করে উনার নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করতেন। আবার অনেকে স্যাটেলাইট ভিত্তিক মুঠোফোন ব্যবহার করে তাদের ব্যবসাবাণিজ্য এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। যেহেতু এ ধরনের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে আইনসিদ্ধ নয় এবং একটি অপরাধ কর্ম তাই স্যাটেলাইট ভিত্তিক যারা ব্যবহার করছে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করে থাকে গভীর সমুদ্রে দায়িত্বে থাকা বাহিনীর সদস্যরা। সেক্ষেত্রে এসব বৈধ। কারণ গভীর সমুদ্রে মোবাইল ফোন কার্যকর নয়। এ কারণে ওইসব এলাকায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির স্প্রেকট্রাম বিভাগের রেডিও কমিউনিকেশন স্ট্যাডি অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক ড. মো. সোহেল রানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাধারণত স্যাটেলাইট ফোনের অনুমতি দেওয়া হয় না। বিশেষ প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে এ পর্যন্ত ওই ফোনের অনুমোদন দিয়েছে বিটিআরসি। ডিপ্লোমেটিক কোর, ইউএন অর্গানাইজেশন, বাংলাদেশ আর্মি, তেল, গ্যাস কোম্পানি, সেভরন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে স্যাট ফোন আছে। ব্যক্তি পর্যায়ে এ পর্যন্ত কাউকে স্যাট ফোনের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি। সোহেল রানা বলেন, আমরা যদি অবৈধ স্যাট ফোনের সন্ধান পাই তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শাস্তি হিসেবে মামলা ও আর্থিক জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে ব্যক্তিপর্যায়ে এ ধরনের ফোন ব্যবহারে আমরা উদ্বিগ্ন। স্যাটেলাইট মোবাইলে যে কোনো জায়গা থেকে ফোন করা যায়। টাওয়ারের দরকার হয় না। স্যাটেলাইট ফোন আর মোবাইল ফোনের তেমন কোনো পার্থক্য নেই, পার্থক্য শুধু নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে। এখানে টেরিস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয় না। কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে এই নেটওয়ার্ক কাজ করে। এজন্যই যে কোনো স্থানে বা আবহাওয়ায় এই ফোনের নেটওয়ার্ক কখনো বিকল হয় না।