কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে গত তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এ তথ্য জানান। বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটরিয়ামে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর সাংবাদিকদের নিয়ে এটাই তার প্রথম মতবিনিময়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. হাবিবুর রহমান, কমডোর এম ফজলার রহমান, মোহাম্মদ শহীদুল আলম ও কমডোর কাওছার রশিদ।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, গত তিন মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৮২ টিইইউএস (২০ ফুট সমমান), যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৬ হাজার ৯৮৬ টিইইউএস বেশি।
প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি কনটেইনারের জট নিরসন এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতেও সাফল্য এসেছে দাবি করে তিনি বলেন, ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৫ দশমিক ৫ হাজার কনটেইনারের স্থিতি ছিল। অর্থাৎ মোট ধারণক্ষমতার প্রায় ৮৫ শতাংশ স্থান ভর্তি ছিল। গত তিন মাসে পদ্ধতিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে তা ৩৪ হাজারে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে জাহাজের এভারেজ ওয়েটিং টাইম ৬-৮ দিন থেকে একদিনে নেমে এসেছে। জাহাজ আসার পর অন অ্যারাইভাল বার্থিং পাচ্ছে।
এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, চলতি অর্থবছরের গত চার মাসে বন্দরের ১ হাজার ৬৪৩ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। একইসঙ্গে রাজস্ব উদ্বৃত্তও ২৮ দশমিক ০১ শতাংশ বেশি হয়েছে। সেবার মান অক্ষুণ্ন রেখে রাজস্ব আয় আরও বাড়ানো এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে রাজস্ব ব্যয় হ্রাস করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
সকল ধরনের সিন্ডিকেট ভেঙে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে দেওয়া ২৩টি শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যার সুফল বন্দর ব্যবহারকারীরা পেতে শুরু করেছেন। যেসব ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন, সেসব ক্ষেত্রে আমরা সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করছি।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, কাজের গতি বাড়াতে বন্দরে জনবল নিয়োগ, পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালকে গতিশীল করা, নতুন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, বন্দরের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা কনটেইনার, কার্গো ও গাড়ি সরানোর তৎপরতা চলছে। পোর্ট ইকো সিস্টেম, পোর্ট কমিউনিটি সিস্টেম, ডিজিটালাইজেশন এবং আধুনিকীকরণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিশ্বমানের বন্দরে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাহাজের নতুন রুট প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, করাচি-চট্টগ্রাম নতুন রুট চালু হওয়ার কারণে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এতে করে ব্যয় সাশ্রয় এবং উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নতুনভাবে গতিশীলতা সৃষ্টি হবে। পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে লাইনার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রথমবার গত ১১ নভেম্বর এইচআর শিপিং লাইনের অধীনে একটি জাহাজ ৩২৮ কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম আসে। ১২ নভেম্বর কনটেইনার খালাস করে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে। জাহাজটি মূলত দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে করাচি বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম আসে। জাহাজটির সাধারণ রাউন্টিং হচ্ছে দুবাই জেবল আলী-করাচি-চট্টগ্রাম-ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া-মুন্দা (ভারত)-দুবাই। এই রুটে আমদানি পণ্যের কনটেইনার পর্যাপ্ত হলে নিয়মিত জাহাজ পরিচালনা করতে মালিকরা আগ্রহী। ইতোপূর্বে পাকিস্তানের সঙ্গে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতো।
দক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক উল্লেখ করে এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে বন্দর ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি অংশীদারিত্ব একটি দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ও চ্যালেঞ্জ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল অপারেশন ও ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবভিত্তিক গ্লোবাল অপারেটর আরএসজিটিআইকে সম্পৃক্ত করেছে। আমরা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় টার্মিনাল অপারেটর এপিএম-এর সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। এ লক্ষ্যে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার কাজ করছে। আশা করা যায়, আগামী ছয় মাসের মধ্যে কনসেশন চুক্তি করা সম্ভব হবে। বে-টার্মিনালের কনটেইনার টার্মিনাল-১ ও ২ নির্মাণের জন্য পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলমান।
এনসিটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ টার্মিনাল হওয়ায়, তা পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগের বিষয়টি পিপিপিএ’তে প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই