কর্মজীবনের একটা সময় পেরিয়ে সবাই সন্তানসন্ততির ওপর ভরসা করে আরাম-আয়েশে চলতে চায়। কিন্তু সেই সৌভাগ্য কজনের কপালেই বা থাকে। কেউ জীবনের শেষ সময়টুকু বিদ্ধাশ্রমে কাটিয়ে দেয়, কেউ বা আবার জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বয়সের বোঝা কাঁধে নিয়েও জীবিকার তাগিদে ছন্নছাড়া হয়ে ঘুরতে হয়। এ রকমই একজন বয়োবৃদ্ধ লড়াকু নারী গুলবানু বেগম। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রথম ছাত্রী হলের সামনে প্রায় এক দশক ধরে সবজি বিক্রি করছেন। তিনি তিন মেয়ে ও এক পুত্রসন্তানের জননী। বহু কষ্টে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন গুলবানু। তবে ছোট মেয়ের স্বামীর পায়ে সমস্যা থাকার কারণে মেয়ের ভরণপোষণও তার কাঁধের ওপর এসে পড়েছে। ছেলে দিনমজুর হওয়ায় নিজের বউ-বাচ্চার ভরণপোষণ করতেই নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ৮০ বছর বয়সি স্বামী জমশেদ আলী দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে শয্যাশায়ী। এদিকে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া গুলবানু একাই পরিবার সামাল দিচ্ছেন। কনকনে শীতের সকালে সবাই কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে থাকলেও গুলবানুকে সবজি সংগ্রহ করতে সকালে ছুটে যেতে হয় স্থানীয় টুকের বাজারে। রোদ, বৃষ্টি, বর্ষা কিংবা কনকনে ঠান্ডা কিছুই কাবু করতে পারে না গুলবানুকে। করবেই বা কী করে। যার পিছুটান নেই তাকে আটকাবার সাধ্যও কারও নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও কর্মচারী সূত্রে জানা যায়, তিনি প্রায় এক দশক এখানে সবজি বিক্রি করেন। কখনো কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন না তিনি। এমনকি শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী ২ টাকা, ৫ টাকার সবজিও বিক্রি করেন বলে জানিয়েছেন তারা। পরিবারের দীনতা নিয়েও মুখে সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল থাকেন গুলবানু। প্রথম ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা বলেন, বাহির থেকে সবজি ক্রয় করতে আমাদের দূরের মার্কেটে যেতে হয়। ফলে আমাদের সময় এবং টাকা নষ্ট হয়। তাই আমরা খালার (গুলবানু বেগম) কাছ থেকে সবসময় সবজি ক্রয় করি। উনি অনেক আন্তরিক মানুষ।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে গুলবানু বেগম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইয়ারা (মেয়েরা) আমার নিজের মাইয়ার মতো। তাদের কাছে সবজি সরবরাহ করে আমি আনন্দ পাই। তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ তাই বাধ্য হয়েই আমাকে কাজ করতে হয়। কাজ না করলে আমার পরিবার চলবে না। তাই বসে তাকার সুযোগ আমার নেই।’