বরেন্দ্র জেলা নওগাঁয় প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে বারি-১২ জাতের লাউ বেগুন। এ বেগুনের এক একটির ওজন এক থেকে দেড় কেজি। প্রতিটি গাছে অন্তত ৭ থেকে ৮ কেজি বেগুন ধরেছে। অন্য জাতের বেগুনের চেয়ে এ বেগুনের ফলন ও গুণগত মান ভালো হওয়ার পাশাপাশি বাজারে দামও বেশি। এ বেগুনের রোগবালাই কম; সেচ দিতে হয় কম। এর ভর্তা যেমন সুস্বাদু, তেমনি ভাজিসহ ও অন্যান্য তরকারিতে স্বাদও অতুলনীয়। প্রতি বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে চারা লাগানো হলে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে ফলন পাওয়া যায়। এই নতুন জাতের বেগুনের চাষ করে জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন নওগাঁর চাঁদপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ও বৃষ্টি দম্পতি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাউ। কিন্তু কাছে গেলে ভুল ভাঙবে। মাঝারি আকারের লাউয়ের মতো সবজিটি অতি পরিচিত একটি বেগুন। জাতের নাম বারি-১২। এই বেগুনে রয়েছে হরেক রকমের পুষ্টিগুণ। ভিটামিন ও আয়রন। এটি শক্তিশালী একটি এন্টিঅক্সিডেন্টও বটে। প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকায় এটি রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ থাকায় চোখের পুষ্টি জোগায়, চোখের যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। এ বেগুনে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। যা দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারী। নতুন এ জাতের বেগুন প্রচলিত অন্যান্য বেগুনের চেয়ে ওজন বেশি হয়। তাই একে কেউ কেজি বেগুন আবার কেউবা লাউ বেগুন বলে থাকে। এই বেগুন উচ্চ ফলনশীল অর্থকরী ফসল এবং ব্যাক্টেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ সহনশীল।
নওগাঁ সদর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৫)। তিনি ২০১৫ সালে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে সাংসারিক কারণে আর লেখাপড়া করা হয়নি। তখন তিনি বেকার হয়ে সংসারের হাল ধরেন। এরপর আস্তে আস্তে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ শুরু করলেও সাফল্যের মুখ দেখতে না পেরে তিনি ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি বানু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর সদস্য হোন। তাঁদের ঘরে রয়েছে একমাত্র ছেলে আবু হাসান। বয়স তার আট বছর। পিকেএসএফের সহায়তায় মৌসুমী থেকে ২০২৪ সালে এই লাউ জাতের বেগুন চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তারা ৬০০টি বেগুনের চারা দেন। তখন তাদের নিজস্ব ১৫ শতক জমিতে লাউ বেগুনের চারা রোপণ করেন। এখন সেসব গাছে প্রচুর বেগুন ধরেছে। রকিফুল আরও বলেন, গত সপ্তাহে নওগাঁ হাটে দেড় মণ বেগুন নিয়ে গিয়েছিলাম। হাটে নিয়ে যাওয়ার পর সবাই বলছে এটি লাউ না বেগুন। অন্য বেগুন যেখানে ৫০০ টাকা মণ আর সেখানে আমি ১৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। নিমিষেই শেষ। অন্য বেগুন থেকে এ বেগুনের লাভ চার গুণ। এরপর প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে এ বেগুন দেখতে আসছেন লোকজন। রফিকুলের স্ত্রী বৃষ্টি বানু বলেন, মৌসুমী অফিস থেকে ১৫ শতক জমির জন্য নতুন জাতের লাউ বেগুনের ৬০০টি চারা দিয়েছিল। আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে লাগিয়েছি। প্রতিটি বেগুনের ওজন এক থেকে দেড় কেজি। বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছি। এ জন্য মৌসুমীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দম্পতি।