দুই নভোচারীকে কখন এবং কীভাবে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়?
সোমবার গভীর রাতে সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে ফিরে আসার মিশনটি স্থানীয় সময় ১০:৪৫ মিনিটে (০২:৪৫ জিএমটি) শুরু হয়েছিল। তাদের বহনকারী স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলটি মঙ্গলবার রাত ১:০৫ মিনিটে (০৫:০৫ জিএমটি) মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) থেকে পৃথিবীর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। অবশেষে মহাকাশযানটি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার ঠিক আগে (২২:০০ জিএমটি) আটলান্টিক মহাসাগরে অবতরণ করে। নভোচারীদের প্রস্থান এবং প্রত্যাবর্তনের দৃশ্য- নাসা টিভি সরাসরি সম্প্রচার করে। এর আগে, অর্থাৎ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলটি মহাকাশ স্টেশনে ডক করা ছিল। এই ক্যাপসুলে মূলত নাসা নভোচারী নিক হেগ এবং রুশ নভোচারী আলেকজান্ডার গোরবুনভকে মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) নিয়ে আসেন, যেখানে উইলমোর-উইলিয়ামসের জন্য দুটি সিট রাখা হয়। কিন্তু চারজন নভোচারী একই ক্যাপসুলে ফিরতে পারেননি যতক্ষণ না পর্যন্ত এই চার নভোচারীকে বহনকারী একটি অতিরিক্ত ক্রু স্টেশনে আসে। অবশেষে ড্রাগন ক্রু-১০, রবিবার স্থানীয় সময় রাত ১২:০৪ মিনিটে (০৪:০৪ জিএমটি) মহাকাশ স্টেশনে ডক করে, যেখানে ছিলেন নাসা নভোচারী অ্যান ম্যাককলেইন এবং নিকোল আয়ার্স, জাপানি নভোচারী তাকুয়া ওনিশি এবং রাশিয়ান নভোচারী কিরিল পেসকভ। তারা শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে তাদের মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করেন।
নাসার নভোচারীদের পৃথিবীতে ফেরা...
২৮৬ দিন পর নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং তার সঙ্গী বুচ উইলমোর। কেমন ছিল তাদের দীর্ঘ সময়ের মিশন?
জুন ৫ : সামান্য বিলম্ব শেষে, বোয়িং স্টারলাইনার যাত্রা করে। জুন ১৪, উইলিয়ামস এবং উইলমোরের তাদের ফেরার কথা ছিল।
কিন্তু পরের দিন জুন ৬, স্টারলাইনারের মহাকাশযানটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) সফলভাবে ডক করে।
জুন ১১ : নাসা জানায়, স্টারলাইনারে হিলিয়াম ‘লিক’ ধরা পড়ে। নভোচারীদের মিশন জুন ১৮ পর্যন্ত বাড়িয়ে নেওয়া হয়।
আগস্ট ২৪ : নাসা নিশ্চিত করে জানায়, নভোচারীরা ২০২৫ সালে আলাদা মহাকাশযানে করে বাড়ি ফিরতে পারে। তা ছাড়া কোনো ক্রু ছাড়াই স্টারলাইনারের যান পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে।
সেপ্টেম্বর ৭ : ক্রুবিহীন স্টারলাইনার মহাকাশযানটি নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস স্পেস হার্বরে সফল অবতরণ করে।
সেপ্টেম্বর ২৯ : ইলন মাস্কের স্পেসএক্স মহাকাশযানের সাহায্যে মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) যাওয়ার জন্য দীর্ঘ ছয় মাসব্যাপী একটি পরিকল্পনা করে। মিশনের জন্য সেই মহাকাশ যানে উইলিয়ামস এবং উইলমোরের জন্য দুটি খালি সিট থাকবে।
মার্চ ১৪ : অবশেষে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) যাওয়ার উদ্দেশে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের ক্রু-১০ পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।
মার্চ ১৬ : স্পেসএক্সের ক্রু-১০ মহাকাশযানটি পৃথিবী ছেড়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছায়।
মার্চ ১৭ : উইলিয়ামস এবং উইলমোর পৃথিবীতে ফেরার প্রস্তুতি নেন।
মার্চ ১৮ : ০৫.০৫ জিএমটি: মহাকাশযানটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) ডক থেকে যাত্রা শুরু করে।
১২.১১ জিএমটি (সম্ভাব্য) : স্পেসএক্সের ক্রু-১০ মহাকাশযানটি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে।
২১.৫৭ জিএমটি (স্থানীয় সময় বিকাল ৫.৫৭ মিনিটে) : স্পেসএক্সের ক্রু-১০ মহাকাশযানটি ফ্লোরিডার উপকূলে অবতরণ করে।
নাসা নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস [বামে] এবং বুচ উইলমোর ২০২৪ সালের ৫ জুন বুধবার ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরালের স্পেস লঞ্চ কমপ্লেক্স ৪১-এ লঞ্চ প্যাডের পথে একটি ছবির জন্য একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন। ছবিটি বোয়িং স্টারলাইনার ক্যাপসুলে তাদের উড্ডয়নের আগে তোলা। তথ্যসূত্র : এপি
আটকে পড়া নভোচারীরা স্পেসএক্স ক্যাপসুলে করে পৃথিবীতে ফেরেন তাদের সম্পর্কে যা জানা গেল...
গত বছরের ৫ জুন সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল বোয়িং স্টারলাইনার। আট দিনের সফরে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে সেখানেই আটকে পড়েন সুনীতারা। তারপর থেকে একাধিক বার তাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু বার বার তা পিছিয়ে গিয়েছে। আট দিনের সফর দীর্ঘায়িত হয়েছে ৯ মাসে। অবশেষে- নাসার এই দুই নভোচারী মহাকাশে নয় মাস আটকে থাকার পর পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। বোয়িং মিশনে, উইলমোর কমান্ডার হিসেবে এবং উইলিয়ামস পাইলট হিসেবে কাজ করেছেন।
মহাকাশ স্টেশনে তাদের এই দীর্ঘ অবস্থান এবং একটি শ্বাসরুদ্ধকর প্রত্যাবর্তন মিশন সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য জানা গেছে...
আটকে থাকা দুই নভোচারী কারা?
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) আটকে থাকা দুই নভোচারী হলেন ৫৯ বছর বয়সি সুনীতা উইলিয়ামস (সুনী) এবং ৬২ বছর বয়সি ব্যারি বুচ উইলমোর, দুজনেই নাসার প্রশিক্ষিত অভিজ্ঞ মহাকাশচারী।
♦ সুনীতা উইলিয়ামস : আইএসএসের কমান্ডার এবং মার্কিন নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুনীতা ১৯৯৮ সালে নাসায় যোগ দেন। কর্মজীবনে তিনি ৩২২ দিন মহাকাশে কাটিয়েছেন এবং নয়টি স্পেসওয়াক করেন। ২০১৭ সাল পর্যন্ত সুনীতা উইলিয়ামস মহিলা নভোচারীদের মধ্যে সর্বাধিক স্পেসওয়াকের রেকর্ডধারী ছিলেন। পরে অবশ্য পেগি হুইটসন ১০টি স্পেসওয়াক করে সে খেতাব অর্জন করেন।
♦ বুচ উইলমোর : ২০০৯ সালে বুচ উইলমোর স্পেস শাটল আটলান্টিসে চড়ে প্রথম মহাকাশে যান। বোয়িং স্টারলাইনার মিশনের আগে, তিনি ১৭৮ দিন মহাকাশে কাটিয়েছেন। তিনি পূর্ববর্তী আইএসএস মিশনে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার এবং কমান্ডার হিসেবে কাজ করেছেন, মহাকাশে উদ্ভিদের বৃদ্ধি, মানবদেহের ওপর মাইক্রোগ্রাভিটির প্রভাব এবং পৃথিবীর পরিবেশগত পরিবর্তন সম্পর্কে গবেষণা করেছেন।
সুনীতারা কেন আটকা পড়েন?
নভোচারীদের বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য তৈরি মহাকাশযানের প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে উইলিয়ামস এবং উইলমোর আটকে যান। তারা বোয়িংয়ের সিএসটি-১০০ স্টারলাইনারে করে ক্রু-যুক্ত পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন। এই মিশনের লক্ষ্য- নভোচারীদের স্টেশনে আনা-নেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত মহাকাশযান তৈরি। নাসার ভাষ্য, ভবিষ্যতে চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহে মানব মিশনের জন্য (আর্টেমিস মিশনসহ) অজানা মহাকাশকে আরও জানার জন্য অনুসন্ধানে বেশি মনোনিবেশ করা। কিন্তু স্টেশনে ২৫ ঘণ্টা পার হওয়ার পরে, স্টারলাইনার ক্যাপসুলটি হিলিয়াম লিক এবং ত্রুটিপূর্ণ থ্রাস্টারের সম্মুখীন হয়, যা পুনঃপ্রবেশে স্টিয়ার এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যখন এটি (৬ জুন) আইএসএস-এ পৌঁছেছিল, তখন যানটির ২৮টি থ্রাস্টারের মধ্যে চারটিতে ত্রুটি দেখা দেয়, ফলে স্টেশনের সঙ্গে ডক দীর্ঘায়িত হয়। যদিও প্রকৌশলীরা থ্রাস্টারগুলোকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন, তবে নাসা মহাকাশযানটিকে মানব ভ্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করে এবং বোয়িং ক্যাপসুলটিকে খালি ফেরত পাঠায়, উইলিয়ামস এবং উইলমোর স্টেশনে থেকে যান। ২০২৪ সালের আগস্টে, নাসা স্পেসএক্সের একটি যানে করে তাদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেটি হলো- ক্রু ড্রাগন-৯, যা ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, তখন থেকে এটি আইএসএস-এ ডক করা আছে, তবে তাদের আগে ফিরিয়ে আনলে মহাকাশ স্টেশনে শুধু একজন নভোচারী থাকতেন, যা গবেষণা এবং জরুরি ব্যবস্থাপনায় বাধাগ্রস্ত হবে। অবশেষে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন-১০ মহাকাশ স্টেশনে নভোচারী পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে উইলিয়ামস-উইলমোরকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
দুই নভোচারী কত দিন আটকে ছিলেন?
উইলিয়ামস এবং উইলমোর ২০২৪ সালের ৫ জুন থেকে মহাকাশে ছিলেন, অর্থাৎ তারা ফিরে আসার সময় ‘নয় মাসেরও বেশি সময়’ কক্ষপথে ছিলেন। যদিও নভোচারীদের জন্য আইএসএসে অবস্থানের স্ট্যান্ডার্ড সময় ছয় মাস।
দীর্ঘ সময় তারা কীভাবে বেঁচে ছিলেন?
অপ্রত্যাশিত অবস্থান সত্ত্বেও, দুই নভোচারীর স্বাস্থ্য বেশ ভালো ছিল। এমনকি জানুয়ারি মাসে তারা একসঙ্গে একটি স্পেসওয়াকও পরিচালনা করেন। স্টেশনে তারা ব্যায়াম, গবেষণা এবং অবসর সময়ের রুটিন মেনে চলেন। তাদের বেঁচে থাকার জন্য, কয়েকটি মহাকাশ সংস্থা ও বেসরকারি কোম্পানি বছরজুড়ে খাবার, পানি এবং অক্সিজেন সরবরাহ করত। লন্ডন টাইমসের মতে, ক্রিসমাসে সুনীতারা স্মোকড ওয়েস্টার, কাঁকড়া, হাঁসের ফ্লোয়ে গ্রাস, ক্র্যানবেরি সস, লবস্টার এবং স্মোকড স্যামনসহ উৎসবের মুখোরোচক খাবারও উপভোগ করেন। তারা ইমেল ও ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
‘চাঁদ থেকে মঙ্গল’- এটাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি
-সুনীতা উইলিয়ামস
নাসার সুনীতাদের জন্য, গত গ্রীষ্মে মহাকাশ স্টেশনে নির্ধারিত আট দিনের সংক্ষিপ্ত মিশন নয় মাসের বিশাল কর্মযজ্ঞে পরিণত হয়। তাদের এই অপ্রত্যাশিত মিশন, মহাকাশ ভ্রমণ ইতিহাসে দীর্ঘতম মিশনগুলোর একটি। তবে, পৃথিবীতে ফিরে আসার পর, সুনীতা সম্ভবত আবার মহাকাশের কথা ভাববেন। তিনি সে বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে নিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে: যা হবে ভবিষ্যতের দিকে একটি যাত্রা।
ফরচুন : মহাকাশ কেন, এখনই কেন?
সুনীতা উইলিয়ামস : মানবদেহ স্বাভাবিক -ভাবেই অনুসন্ধানে আগ্রহী। কৌতূহলী প্রবণতা নিয়ে আমরা জন্মগ্রহণ করি। যা আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।
ফরচুন : এমন কী আছে যা আমরা এখনো জানতে চাই?
সুনীতা উইলিয়ামস : আমরা জানতে চাই মহাবিশ্বে আসলে আমাদের স্থান কোথায়। আপনি যখন মহাকাশে যান, এবং দেখেন, কেবল একটি ছোট দ্বীপে আমাদের সবার বসবাস, তখন এটি আরও দার্শনিক হয়ে ওঠে। এখানে আমাদের উদ্দেশ্য কী? আমাদের গ্রহের কী হয়েছিল এবং এখন কী হচ্ছে?
ফরচুন : মঙ্গল গ্রহ কী ভূমিকা রাখে?
সুনীতা উইলিয়ামস : আমরা যদি সেখানে যেতাম, তবে শেষ পর্যন্ত সেখানে কী ঘটতে চলেছে সে সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পেতে পারি। কীভাবে আমরা আমাদের গ্রহকে কার্যকর রাখব এবং অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতে পারে। আর সেটি তখন হয় যখন- আমরা মহাকাশে গিয়ে আমাদের দিগন্তকে আরও প্রসারিত করে আরও বৃহৎ পরিসরে চিন্তা করতে শুরু করি।
ফরচুন : তা ছাড়া এটি কি চাঁদে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়?
সুনীতা উইলিয়ামস : আমি জানি না আমরা কীভাবে মঙ্গলে যাব। আমি মনে করি না কেউ সঠিকভাবে এটি জানে। তবে চাঁদে ফিরে যাওয়া এবং (তারপর) মঙ্গলে যাওয়ার চেষ্টা করার প্রক্রিয়ায়, আমি বলব আমরা কিছু শিখতে যাচ্ছি।
ফরচুন : তাহলে এটি দেখতে কেমন?
সুনীতা উইলিয়ামস : চাঁদ থেকে মঙ্গল- এটাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আমরা চাঁদে সফলভাবে ফিরে যেতে চাই, তার মানে সেখানে আমাদের একটি ল্যান্ডার থাকা দরকার। সম্ভবত একটি মহাকাশ স্টেশনও থাকা দরকার- যা মূলত চাঁদ থেকে মঙ্গলে যাওয়ার গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেখানে আমরা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা, এমনকি চাঁদে আমরা টেকসই কিছু করতে পারি। যখন আমরা ল্যান্ডার এবং মহাকাশযান সম্পর্কে চিন্তা করি তখন এটি কিছুটা সায়েন্স ফিকশনের মতো মনে হয়। তবে যখন আমি প্রথম নাসা ভবনে আসি, তখন মহাকাশ স্টেশনকেও পাগলামি ধারণা মনে হয়েছিল।
ফরচুন : কখন আমরা চাঁদে এবং মঙ্গলে একটি স্টেশন স্থাপন করব?
সুনীতা উইলিয়ামস : এটি কোনো স্বল্প সময়ের ব্যাপার নয়। আমি মনে করি, এই দশকেই চাঁদে মানুষ থাকবে। ধারণা করছি- আমরা তাড়াতাড়ি এটি শুরু করতে পারব। আমরা সেখানে মানুষ পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারব এটি করা কতটা কঠিন। মনে রাখবেন, আমরা অ্যাপোলো প্রোগ্রামের জন্য যেখানে গিয়েছিলাম সেখানে যাচ্ছি না। এটি কিছুটা জটিল। আমরা মেরুতে আছি, তাই এটি একটি ভিন্ন কক্ষপথ। এটি একটি ভিন্ন পরিবেশ।
ফরচুন : এখনো অনেক কিছু জানি না।
সুনীতা উইলিয়ামস : আমরা (মহাকাশ থেকে) ফিরে আসতে ও শারীরিকভাবে ঠিক থাকতে সক্ষম হয়েছি। তবে যদি দেখতে চান যে লোকেরা দীর্ঘ সময় মহাকাশে বসবাস করলে তারা কেমন করবে। চাঁদ খুব দূরে নয়, তবে সেই মিশনটি কয়েক সপ্তাহ দীর্ঘ হবে। এতে তারা মাইক্রোগ্রাভিটিতে থাকবে। এর চেয়ে আরও দূরে- মঙ্গলে যাওয়া দীর্ঘ যাত্রা হবে। সময় নেবে! এতে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ থাকবে না। তাই আমাদের শিখতে হবে। বের হতে হবে।
এর আগেও কি কেউ মহাকাশে আটকে ছিলেন?
বোয়িংয়ের নতুন স্টারলাইনার ক্রু ক্যাপসুলের একটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর যাত্রা শুরু করেন, যদিও পৃথিবীর বুকে মাত্র আট দিনের জন্য তাদের অনুপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তারা যখন স্পেসএক্সের মাধ্যমে পৃথিবীতে ফেরত আসেন, তখন তারা আমাদের গ্রহ অর্থাৎ পৃথিবী থেকে ২৮৬ দিন দূরে কাটিয়েছেন- যা প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে ৩৬ গুণ বেশি।
অপ্রত্যাশিত হলেও- সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরই প্রথম নভোচারী নন যারা মহাকাশে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি অবস্থানের সম্মুখীন হয়েছেন। প্রযুক্তিগত সমস্যা কিংবা ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা- নভোচারীদের পরিকল্পিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় কক্ষপথে থাকতে হয়েছে এমন পূর্ববর্তী ঘটনাও রয়েছে।
মার্কিন নভোচারী ফ্র্যাঙ্ক রুবিওর মহাকাশ স্টেশনে ৩৭২ দিনের মিশনটি ছিল এই মার্কিন নভোচারীর দীর্ঘতম একক মহাকাশ যাত্রা, যা ২০২২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চলেছিল, যা সয়ুজ মহাকাশযানের সমস্যার কারণে বাড়ানো হয়েছিল। তিনি অন্য একটি সয়ুজ ক্যাপসুলে করে ফিরে আসেন। নাসার প্রথম বছরব্যাপী মহাকাশচারী ছিলেন স্কট কেলি; তিনি ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে স্পেস স্টেশনে ৩৪০ দিন ছিলেন।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত নভোচারী সের্গেই ক্রিকালেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির কারণে এখনকার বাতিল হওয়া মির মহাকাশ স্টেশনে ৩১১ দিন আটকে ছিলেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং তহবিল সংকটের কারণে তার প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত হয়েছিল, যার কারণে তাকে পরিকল্পিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় কক্ষপথে থাকতে হয়েছিল। যখন তিনি ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে অবতরণ করেন, তখন তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে নয়, স্বাধীন রাশিয়ায় ফিরে আসেন।
রাশিয়ান মহাকাশচারী ভ্যালেরি পোলিয়াকভ ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি সময় মহাকাশ স্টেশনে ১৪ মাস কাটিয়েছিলেন। যদিও তিনি স্বেচ্ছায় এটি করেছিলেন। একজন চিকিৎসক হিসেবে, তিনি ওজনহীনতার দীর্ঘ সময় পরে মানব শরীর ও মনের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করতে চেয়েছিলেন। তার ৪৩৭ দিনের মহাকাশ ফ্লাইটটি আজোও বিশ্ব রেকর্ড হয়ে আছে।
নাসার ক্রিস্টিনা কোচ ২০১৯ এবং ২০২০ সালে তার ৩২৮ দিনের মহাকাশ স্টেশন মিশনের মাধ্যমে এই খেতাব অর্জন করেছেন। সেই একই ফ্লাইটের সময়, তিনি জেসিকা মেইরের সঙ্গে প্রথম সর্ব-মহিলা স্পেসওয়াক করেছিলেন। কোচ বর্তমানে নাসার প্রথম আর্টেমিস ক্রুতে নিযুক্ত আছেন, যা আগামী বছরের প্রথম দিকে চাঁদের চারপাশে উড়ে ফিরে আসবে।
রাশিয়ান ওলেগ কোনোনেনকো তার কর্মজীবনে মহাকাশে ১,০০০ দিন অতিক্রমকারী প্রথম ব্যক্তি। গত শরতে মহাকাশ স্টেশন থেকে ফিরে আসার সময়, তিনি পাঁচটি মহাকাশ ফ্লাইটে ১,১১১ দিন মহাকাশযানে ছিলেন- যা সম্মিলিতভাবে তিন বছরেরও বেশি। সাবেক নাসা নভোচারী পেগি হুইটসন তিনটি দীর্ঘ স্টেশন স্টিন্ট এবং অ্যাক্সিওম স্পেসের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত ব্যক্তিগত ভ্রমণে ৬৭৫ দিনসহ আমেরিকার সবচেয়ে অভিজ্ঞ মহাকাশ যাত্রী।
ফটো গ্যালারি...
স্পেসএক্সের উদ্ধারকৃত জাহাজ সুনীতা উইলিয়ামসকে স্পেসএক্স ড্রাগন মহাকাশযান থেকে বের হতে সাহায্য করা হচ্ছে।
ফ্লোরিডার টালহাসি উপকূলের কাছে অবতরণের পর, নাসার মেডিকেল ক্রু তাদের দুজনকে স্ট্রেচারে তুলতে সাহায্য করছে।
স্পেসএক্সের উত্তপ্ত ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলটি চারটি বড় প্যারাসুটের সাহায্যে গতি কমিয়ে সাগরের বুকে নিরাপদে অবতরণ করে।
নাসার সাপোর্ট টিম ড্রাগন ক্যাপসুলটিকে পানি থেকে তুলে নৌকায় রাখে যাতে মহাকাশচারীরা মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারেন।
স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলটি নিরাপদে অবতরণের পর যানটিকে উদ্ধারকারী দলের জাহাজে তোলা হচ্ছে।
রাশিয়ার আলেকজান্ডার গোরবুনভ ১৭১ দিনের ‘আইএসএস’-এর মিশন শেষে ড্রাগন ক্যাপসুল থেকে বের হওয়ার পর হাত নাড়েন।