দেশের এত চ্যানেল, এত অনুষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও ইত্যাদিই এখনো ঈদের প্রধান বিনোদন, এর কারণ কী?
সেটা তো আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। মূল কারণ হয়তো দর্শকের প্রতি আমাদের কমিটমেন্ট বা দায়বোধ। দর্শক কষ্ট করে সময় নিয়ে ইত্যাদি দেখতে বসেন, তাই আমরাও চেষ্টা করি তার প্রত্যাশা পূরণ করতে, তার সময়ের মূল্য দিতে।
ইত্যাদিতে বিনোদনের পাশাপাশি থাকে শিক্ষামূলক বার্তা, থাকে অসংগতির বিরুদ্ধে তীর্যক নাট্যাংশ, থাকে অনুকরণীয় ভালো মানুষের গল্প, এসব দেখে কি মানুষের বোধদয় হয়?
যাদের বোধ আছে তাদের হয়, আর যারা বোধহীন তাদের হয় না। তাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেও লাভ হবে না। তবে এটুকু বলা যায়, ইত্যাদির কল্যাণে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ সচেতন হয়েছে এবং হচ্ছে। অনেক অসচ্ছল মানুষ সচ্ছল হয়েছেন, অনেকেই পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মান।
বিশ্বের আর কোথাও একটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপক, পরিচালক, নির্দেশক, লেখক ও প্রযোজক তিন যুগ ধরে একই ব্যক্তি আছে বলে জানা নেই- এটাও রেকর্ড?
অনেকেই বলেছিলেন এ রেকর্ডের জন্য গিনেস বুকে আবেদন করতে, কারণ তাদের ঝুলিতেও নাকি এ ধরনের রেকর্ড নেই; কিন্তু এসব ব্যাপারে আমার কোনো উৎসাহ নেই। একসময় গিনেস রেকর্ডের জন্য প্রতিযোগিতা দেখেছি। এমনকি ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার নিয়েও গিনেস রেকর্ড হয়েছে। ইত্যাদির এমনিতেই অনেক রেকর্ড আছে মানুষের অন্তরে। যা দর্শকরা জানেন।
আপনি কি মনে করেন ইত্যাদির সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে?
যাদের জন্য অনুষ্ঠান করি তাদের কাছে হয়েছে। আমাদের কাছে ইত্যাদির এই দর্শকের রায়ই চূড়ান্ত। তাদের ভালোবাসা, সমর্থন, সহযোগিতার ফলে ইত্যাদির এ দীর্ঘযাত্রা সম্ভব হয়েছে। তাই মূলত দর্শক মূল্যায়নই আমার কাছে বড়। আর অন্যান্য মূল্যায়ন বা পদক এসব সম্পর্কে তো সবারই কমবেশি ধারণা আছে। এসব কীভাবে পায়, কারা পায়। এক সময় এসব রাষ্ট্রীয় পুরস্কার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিবেচিত হয়েছে রাজনৈতিক আদর্শ ও সফল চাটুকারিতায়। ফলে পুরস্কার হয়েছে বিতর্কিত। আমি কারও লেজুড়বৃত্তি করি না, কারও কাছ থেকে সুবিধাও নিই না। সুতরাং এসব মূল্যায়ন নিয়ে আমি চিন্তাও করি না।
এবার অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গে আসি। প্রতিবার ঈদের ইত্যাদি শুরু হয় বর্ণাঢ্য আয়োজনে, ঈদের গান দিয়ে। এবার কী করছেন?
এবারও জাতীয় কবির সেই অমর গান দিয়েই শুরু করেছি বর্ণাঢ্য আয়োজনে, ব্যতিক্রমী গায়কিতে, নান্দনিক চিত্রায়ণে। কারণ এ গানটিই আমার কাছে ঈদের গান। এবার গানটিতে অংশগ্রহণ করেছে আমাদের অকুতোভয় সংগ্রামী ছাত্র সমাজ, সঙ্গে ছিলেন কয়েক হাজার দর্শক।
আর কী কী থাকছে?
ইত্যাদিতে যা যা থাকে- গান, নাচ, মিউজিক্যাল ড্রামা, দর্শক পর্ব, সমাজের নানান অসংগতি এবং সমসাময়িক বিষয়ের ওপর বেশকিছু নাট্যাংশ। যেখানে থাকবে অসংগতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। তবে প্রতিটি আইটেমই হয়েছে বর্ণাঢ্য আয়োজনে, ব্যতিক্রমী পরিবেশনায়। অংশগ্রহণ করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় তারকা শিল্পীরা।
এখন নাটকের প্রসঙ্গে আসি। নাটকের নাম ‘ঘরের খবর ঘরেই থাক’- কী বোঝাতে চেয়েছেন?
এক লাইনে বললে, ‘সমস্যা যখন ঘরে-সমাধান পরস্পরে’, অর্থাৎ সংসারের যে কোনো ঝগড়াবিবাদ মেটাতে তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন নেই। তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে সমস্যা বরং বাড়ে, কমে না। তাই নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করা উচিত। সে জন্যই বলা হয়েছে ‘ঘরের খবর ঘরেই থাক’।
সবশেষে জানতে চাইব, ইত্যাদির বিশেষত্ব কী?
ইত্যাদি সব শ্রেণি-পেশা ও সব বয়সের মানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান- এটাই এর বিশেষত্ব। তিন যুগ ধরেই দর্শকরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইত্যাদি দেখতে পারেন। সময়ের পরিবর্তন হয়েছে, অনেকের রুচির পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু ইত্যাদির এবং এর দর্শকের রুচির পরিবর্তন হয়নি, রুচি বিকৃতিও হয়নি। ইত্যাদির দর্শকরা আগে যেমন ইত্যাদি দেখতেন, তিন যুগ পরে এসেও ইত্যাদি দেখছেন।