মাইক্রোপ্লাস্টিক যা ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা। আর প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্র কণাগুলো নদী ও সমুদ্রে যে দূষণ করছে তা এখন বৈশ্বিক উদ্বেগ। পদ্মা-মেঘনার পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীও এই সংকট তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ফলে প্লাস্টিক দূষণের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত ও ভুটানের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
দলনেতা ড. হারুন জানান, বাংলাদেশের অংশের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর প্রতি বর্গ কিলোমিটার পানিতে ২৫ লাখের অধিক ভাসমান মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নদীর তলদেশের প্রতি কেজি কাদায় সাড়ে চার শ পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ফলে এসব নদ-নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে সংগৃহীত মাছের পেটেও বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি দেখা মিলেছে। এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ফর গ্লোবাল চেঞ্জ রিসার্চ-এর অর্থায়নে পরিচালিত ওই গবেষণা প্রকল্পের ফলাফলে আরও জানা যায়, প্লাস্টিক দূষণের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এখানে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্য গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা এবং ইরাবতী নদীর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে যাচ্ছে। বিগত ২ বছর ধরে এই গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে ভুটানের তিনটি পাহাড়ি নদী (হারাছু নদী, মানস নদী ও তোরসা নদী) যারা ব্রহ্মপুত্র নদে পতিত হয়েছে, ভারতের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের পাঁচটি স্টেশন (টুটিং, দিব্রুগড়, তেজপুর, গোয়াহাটি ও ধুবরি) এবং বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পাঁচটি স্টেশন (কুড়িগ্রাম, সুন্দরগঞ্জ, সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জ ও হুমুরিয়া) থেকে গবেষণা প্রকল্পের নমুনা (পানি, নদীর তলদেশের কাদা ও মাছ) সংগ্রহ করা হয়েছিল। অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদ জানান, গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে দেখা যায় ভুটানের নদীগুলোর পানি ও কাদায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণ খুবই নগণ্য। কিন্তু উজানের ভারত ও ভাটির বাংলাদেশের অংশের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি ও কাদায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্য, কোনো কোনো ক্ষেত্রে উদ্বেগজনকহারে বেশি।
তিনি আরও জানান, মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণে আক্রান্ত নদীর মাছের শরীরের এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা রান্নার পরও আমাদের খাদ্যে থেকে যায়, যা মানুষের অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি, হরমোনের ক্রিয়াকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এমনকি আমাদের অন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ উপকারী ব্যাকটেরিয়া সম্প্রদায়গুলোকে ব্যাহত করে দিতে পারে।
এ ছাড়াও কিছু কিছু নদ-নদীতে ন্যানোপ্লাস্টিকেরও দেখা মিলেছে বলে জানান অধ্যাপক হারুন। তিনি বলেন, মাছের মাধ্যমে এই ন্যানোপ্লাস্টিক মানুষের কোষে প্রবেশ করতে সক্ষম যা মানুষের যকৃৎ ও কিডনির মতো মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
এমন উদ্বেগজনক তথ্য উঠে আসার পর ওই বৈজ্ঞানিকের মত, জাতীয় ও আঞ্চলিক উভয় ভাবেই যতটা সম্ভব প্লাস্টিক, বিশেষ করে একক-ব্যবহার্য প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও বর্জনের উদ্যোগ নেওয়া।