সোরিয়াসিস একটি প্রদাহমূলক চামড়া উঠা রোগ। এই রোগে শরীরের বিভিন্ন স্থান হতে মাছের আঁশের মতো (Silvery Scales) চামড়া উঠে। এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ভালো হয়ে যায় ও বার বার দেখা দেয় এবং দীর্ঘদিন রোগটি থাকে। এটা ছোঁয়াচে নয় এবং এর আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যমান।
সোরিয়াসিস কাদের হয় এবং কেন হয়
এ রোগ যে কোনো বয়সে হতে পারে তবে সাধারাণত ২৫-৩০ বছর বয়সে বেশি হয়। নারী পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। এটা একটা Immunological Disease তবে বংশগত ইতিহাস এবং নিকট আত্মীয়দের থাকতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক চাপে এ রোগ বাড়ে। গর্ভাবস্থায় সাধারণত এ রোগ কমে যায়। Streptococci জীবাণু দিয়ে গলার প্রদাহ (Sore throat) হলে এ রোগ দেখা দিতে পারে।
ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এ রোগ হতে পারে বা বাড়তে পারে। যেমন- ১। কিছু ব্লাড প্রেসারের ওষুধ ২। কিছু দাউদের ঔষুধ ৩। কিছু কিছু চর্বি কমার ঔষুধ ৪। কখনো কখনো মানসিক রোগের ঔষুধ ও অন্যান্য ঔষুধ সেবন এ রোগ বাড়তে পারে।
লক্ষণ কি বা কীভাবে চিনবেন যে এটা সোরিয়াসিস
এ রোগ সাধারণত মাথা বা কনুই থেকে শুরু হয় তবে যে কোনো জায়গায় হতে পারে। মাথা, কনুই হাঁটু, কোমর, নখ ইত্যাদি জায়গায় বেশি হয়। প্রথমে লালচে স্পট দেখা যায় যার উপরিভাগে শুরু থেকেই মাছের আঁশের মতো (Silvery Scales) চামড়া থাকে। আঁশ তুলে নিলে সামান্য রক্তপাত হয় (Auspitz Sign)। সাধারণত বেশি চুলকায় না তবে রসুনের কোয়ার মতো চামড়া উঠে।
কীভাবে এ রোগ নির্ণয় করা যায়
খুব সহজেই এ রোগ নির্ণয় করা যায়। ডাক্তার ক্লিনিক্যালি দেখেই রোগ নির্ণয় করতে পারেন। এ রোগ যে সব স্থানে হয় তার, বিস্তৃতি, মাছের আঁশের মতো (Silvery Scales) চামড়া, আঁশযুক্ত চামড়া সরানোর পর Bleeding হওয়া (Auspitz Sign) এবং Skin Biopsy করে সহজেই এ রোগ নির্ণয় করা যায়।
সোরিয়াসিস রোগের চিকিৎসা কী
এ রোগের আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যমান। সময় মতো দীর্ঘমেয়াদে সঠিক চিকিৎসা নিলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে বা রোগ মুক্ত হয়ে সুস্থ জীবনযাপন করা যায়। সোরিয়াসিস রোগে সাধারণত যেসব চিকিৎসা দেওয়া হয়-
১। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ক্রিম বা মলম লাগাতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নিজে নিজে বা অন্যের পরামর্শ নিয়ে মলম লাগানো ঠিক হবে না। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চিকিৎসা নেওয়া উত্তম। ২। ঠিক তেমনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। ৩। ফটোথেরাপি ও ষ্টেরয়েড ইনজেকশন ৪। আধুনিক Biologics দিয়ে চিকিৎসা ৫। তৈলাক্ত মাছ ও স্থানীয়ভাবে তাপ দিলে কিছুটা উন্নতি হয়।
পরিশেষে বলব সোরিয়াসিস অন্যান্য চর্ম রোগের মতো একটি সাধারণ চর্ম রোগ। এটা ছোঁয়াচে নয় এবং এর আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যমান। চর্ম বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা নিলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বা রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। আসুন আমরা সাধারণ জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন করি এবং সুস্থ জীবনযাত্রায় সহায়তা করি। সবচেয়ে বড় কথা এসব ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থা থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। অন্যথায় জটিলতা বাড়তে পারে। কথায় আছে প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ উত্তম।
-ডা. মো. মোশাররফ হোসেন, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র কনসালট্যান্ট, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর, ঢাকা