নানা উদ্যোগের পরও ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে দেখা দিয়েছে আমদানি পণ্যের কনটেইনার জট। ৯ দিনের লম্বা ছুটিতে ইয়ার্ডে জমে গেছে প্রায় ১২ হাজার কনটেইনার। জাহাজ থেকে পণ্য খালাস স্বাভাবিক থাকলেও ঈদের আগে-পরে পণ্যবাহী ভারি যানবাহনের স্বল্পতা এবং অধিকাংশ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারি নিতে আগ্রহী হননি। এ কারণে তৈরি হয়েছে জট।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্য হিসেবে)। ঈদের ছুটি শুরুর আগের দিন অর্থাৎ ২৭ মার্চ কনটেইনার ছিল ৩১ হাজার ২৯০ টিইইউএস। ৯ দিনের ছুটি শেষে গত রবিবার (৬ এপ্রিল) তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৩৬৫ টিইইউএস। এখনও ধারণক্ষমতা অতিক্রম না করলেও অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ স্বাভাবিক হ্যান্ডলিং বজায় রাখতে হলে ধারণক্ষমতার ৩০ শতাংশ জায়গা ফাঁকা থাকতে হয়। এই হিসেবে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার টিইইউএস হলো আদর্শ মান। এর বেশি হলে অপারেশনাল কার্যক্রমে সমস্যা হতে পারে বলে ধরে নেওয়া হয়।
বন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে যেখানে প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার আমদানি কনটেইনার ডেলিভারি হয়, সেখানে গত কয়েকদিনে তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাজারের নিচে নেমে আসে। বন্দরের দৈনন্দিন হ্যান্ডলিং রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬ এপ্রিল ১ হাজার ৯৩৩, ৫ এপ্রিল ১ হাজার ৩৯৭, ৪ এপ্রিল ১ হাজার ১০০, ৩ এপ্রিল ৫৪৪ ও ২ এপ্রিল ৬৯১ টিইইউএস ডেলিভারি হয়। ঈদের দিন কোনো কনটেইনার ডেলিভারি হয়নি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুধু ঈদের দিন ৮ ঘণ্টা ছুটি কাটিয়েছেন। এছাড়া বন্দরের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক সচল ছিল। জাহাজ থেকে পণ্য খালাস স্বাভাবিক গতিতে চলেছে। সেই তুলনায় ডেলিভারি কম হয়েছে। আমরা ডেলিভারি দিতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু আমদানিকারক বা তাদের প্রতিনিধিরা কনটেইনার নেননি।
বন্দর সূত্র জানায়, ইয়ার্ডে কনটেইনার বেড়ে গেলে জাহাজ থেকে নতুন কনটেইনার নামিয়ে রাখার জায়গা থাকে না। কনটেইনার খালাস করতে না পারলে জাহাজ অতিরিক্ত সময় বন্দরে অবস্থান করতে হয়। এতে কনটেইনার ও জাহাজ জট তৈরি হতে পারে। ব্যাহত হতে পারে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের গতি। তাই কনটেইনারের চাপ কমাতে ঈদের আগেই স্বাভাবিকের চেয়ে চারগুণ স্টোর রেন্ট আরোপ করা হয়েছিল। এতে বন্দরের ভেতরে সহনীয় অবস্থা তৈরি হলেও ঈদের ছুটিতে ফের বেড়ে গেছে কনটেইনার। এই জট সামাল দিতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
বিডি প্রতিদিন/মুসা