বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কার্যকরের সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পের কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি এ অনুরোধ জানান।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশকে সময় দেওয়া হোক, যাতে আমদানি বাড়িয়ে ও শুল্ককাঠামো সংস্কার করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়।’
ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, ‘আপনার অভিষেকের পরপরই আমি আমার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়ে জানিয়েছি যে, ১৭ কোটি মানুষের দ্রুতবর্ধনশীল বাজারে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে আগ্রহী। আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণকারী প্রথম দেশ।’
প্রধান উপদেষ্টা জানান, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যে বাংলাদেশেই সবচেয়ে কম শুল্ক আরোপ করা হয়। তুলা, স্ক্র্যাপ লোহা ও কৃষিপণ্যে শুল্ক শূন্য রাখার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতির মতো শীর্ষ মার্কিন পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক হ্রাসের কাজ চলছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান অশুল্ক বাধা দূর করারও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এমনটি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘এর মধ্যে রয়েছে নিরীক্ষা ও পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা হ্রাস, প্যাকেজিং ও লেবেলিংয়ের মানদ সহজীকরণ, শুল্কপ্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং অন্যান্য বাণিজ্যসুবিধা সম্প্রসারণ।’ আগামী তিন মাসের মধ্যেই এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে এমন আশা প্রকাশ করে ড. ইউনূস জানান, ‘এ সময়ের মধ্যে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও ভারসাম্য তৈরির কার্যক্রম শেষ করব।’
চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে চুক্তি স্বাক্ষর, এলএনজিভিত্তিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ, স্টারলিংকসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগুলো তুলে ধরা হয়। উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য- বিশেষ করে তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানি বাড়ানোর কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, যা আমেরিকান কৃষকের আয় ও জীবিকার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দ্রুত বাজারে এসব পণ্য পৌঁছাতে বাংলাদেশে একটি “ডেডিকেটেড বন্ডেড ওয়্যারহাউস” চালুর কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে এসব পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে।’ এ প্রেক্ষাপটে চিঠির শেষাংশে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যে আরোপিত পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, আপনি আমাদের এ অনুরোধ গ্রহণ করবেন।’ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, পাল্টা শুল্কারোপ স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআরে পৃথক চিঠি পাঠানো হবে।