বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের রমরমা অবস্থার প্রধান দুটি কারণ ছিল উন্নত দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা এবং সস্তা শ্রম। এ কারণে পশ্চিমা ক্রেতারা তাদের অর্ডার নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে ভিড় করেছেন। এখন সেই সুযোগ কমে আসছে। বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপের কারণে বাণিজ্যের হিসাবও পাল্টে গেছে। বাংলাদেশের তুলনায় ভারত ও পাকিস্তানে আরোপিত পাল্টা শুল্কের পরিমাণ কম হওয়ায় এই দুটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বেশি সুবিধা পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিকেএমইএর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় কলকারখানা বন্ধ থাকায় কিছু ক্রেতা তাদের অর্ডার পাশের দেশে স্থানান্তর করেছে। অভ্যুত্থানের পর শ্রম অসন্তোষের কারণেও কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এ প্রেক্ষিতে নতুন বছরে যখন রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারায় বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপের ঘটনা সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। এরই মধ্যে ক্রেতারা তাদের অর্ডার স্থগিত করতে বলছে। শুল্কের পরিমাণ কম থাকায় কিছু ক্রেতা হয়তো আগামী দিনের অর্ডার ভারত-পাকিস্তানেও স্থানান্তর করতে পারে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী একক দেশ হিসেবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ দেশ হচ্ছে চীন। এরপরই বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে বাংলাদেশ। তৃতীয় স্থানে ভিয়েতনাম। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে যথাক্রমে তুরস্ক ও ভারত। বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এই পাঁচটি দেশই নেতৃত্ব দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলো হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া। এর মধ্যে চীন ও ভিয়েতনাম বাদে বাকি দেশগুলো বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপের কারণে বাংলাদেশের সামনে নতুন হুমকি হয়ে উঠেছে ভারত ও পাকিস্তান।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে বাংলাদেশি পণ্যে। ভারত ও পাকিস্তানে এই শুল্ক আরোপ হয়েছে যথাক্রমে ২৬ ও ২৯ শতাংশ হারে। ফলে এই দুটি দেশ বাংলাদেশের চেয়ে বাড়তি সুবিধা পাবে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্ব থেকে সাত দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে দেশটিতে প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বাংলাদেশের। আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে দেশটির বাজারে। প্রবৃদ্ধির এ হার চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। আলোচ্য সময়ে চীনের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, ভারতের রপ্তানি ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং পাকিস্তানের রপ্তানি সাড়ে ১৭ শতাংশ হারে বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির এই ধারা পাল্টে যেতে পারে। যে দেশগুলোর ওপর পাল্টা শুল্কের পরিমাণ বেশি তারা পিছিয়ে পড়বে। যেই দেশগুলোর ওপর শুল্কের পরিমাণ কম- তারা রপ্তানিতে এগিয়ে যাবে। ভারত ও পাকিস্তানের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্কের পরিমাণ যেহেতু বাংলাদেশের তুলনায় কম, সে কারণে সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে ওই দেশ দুটির রপ্তানি বাড়তে পারে। তবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রকৃত প্রতিযোগী চীন ও ভিয়েতনাম। ওই দুটি দেশে আরোপিত পাল্টা শুল্কের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকায় বাংলাদেশও কিছুটা সুবিধা পাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফজলে শামীম এহসান জানান, ভিয়েতনামে ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। চীনে পাল্টা শুল্কসহ মোট শুল্ক হার দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশ। এই দুটি দেশ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান প্রতিযোগী। ফলে শুল্কারোপের দিক দিয়ে ওই দুটি দেশের তুলনায় কিছুটা সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ।