ঢাকা মহানগরীতে যেসব সড়কে রিকশা চলাচল নিষেধ সেসব সড়কে যেন রিকশা ঢুকতে না পারে সেজন্য ওইসব সড়কের প্রবেশমুখে ট্র্যাপার বা ফাঁদ বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সহযোগিতায় এটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে এটি পরীক্ষামূলকভাবে রমনার বেইলি রোডে এবং ব্যাটারি গলিতে বসানো হয়েছে। এতে সফলতাও আসছে। প্রথমে এটি ডিএসসিসির যেসব সড়কে রিকশা চলাচল নিষেধ সেখানে বসানো হবে। পরে পর্যায়ক্রমে এটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও (ডিএনসিসি) বসানো হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে সড়কে রিকশা প্রবেশ নিষেধ, সেসব সড়কের প্রবেশমুখে এসব ফাঁদ বসানো হবে। কোনো রিকশা এ ফাঁদ পেরিয়ে যেতে চাইলে লোহার খাঁজে চাকা আটকে যাবে। দুই ধরনের ফাঁদ পাতা হয়েছে। একটা ফাঁদে রিকশার চাকা আটকে যাবে, আরেকটা ফাঁদে রিকশার চাকা আটকে যাওয়ার পাশাপাশি চাকা ছিদ্র করে দেবে। চাকা আটকানোর ফাঁদটি বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে বসানো হয়েছে। আর চাকা আটকানো এবং একই সঙ্গে চাকা ছিদ্র করার ফাঁদটি রমনার ব্যাটারি গলিতে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ, (আইডিইবি) পাশে বসানো হয়েছে। ফাঁদটি একদিকে যেমন ফিডার রোড দিয়ে মেইন রোডে রিকশা উঠতে বাধা দেবে, অন্যদিকে ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতাও প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরীর যেসব রাস্তায় বাস চলাচল করে সেসব রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রবেশ ঠেকাতে ট্রাফিক পুলিশ তৎপর রয়েছে। যে ফাঁদটি কার্যকরী মনে হবে সেটি শহরের অন্যান্য সড়কেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে রাজধানীর রমনা পার্কসংলগ্ন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধার সামনে পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিরোধ নামক একটি ডিভাইস বসানো হয়। এই ডিভাইস উল্টো দিক দিয়ে প্রবেশ করা গাড়ির চাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফুটো করে দিত। সরেজমিনে ব্যাটারি গলিতে গিয়ে দেখা গেছে, রিকশা চলাচল আটকানোর ফাঁদে একজন ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল দাঁড়িয়ে আছেন। ওই স্থানে রিকশা প্রবেশ করতে গিয়ে থামকে দাঁড়াচ্ছে। ফাঁদ দেখে রিকশা ফিরে যাচ্ছে। রিকশায় যাত্রী থাকলে নেমে গিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। অনেক রিকশাচালক সাহস করে পার হতে গিয়ে আটকে যাওয়াসহ চাকা পাংচার হয়েছে। আবার অনেকে এলোমেলো পার হয়ে আটকানো এবং পাংচার দুটিই এড়িয়েছে। প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহনও এর ওপর দিয়ে পার হওয়ার সময় থমকে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ অভয় দেওয়ার পর এসব যানবাহন ফাঁদ পার হচ্ছে।
বেইলি রোডেও একই অবস্থা দেখা গেছে। সেখানে একজন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবলকে দেখা গেছে। তবে সেখানে রিকশা পার হতে গিয়ে আটকে গেলেও পাংচার হচ্ছে না। ফাঁদের বিষয়টি নতুন হওয়ায় অনেকের কাছে কৌতূহল সৃষ্টি করছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, ঢাকা মহানগরীর সড়কে রিকশা চলাচল সীমিত করার অংশ হিসেবে রিকশার ফাঁদ বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব সড়কে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ, ওইসব সড়কে পর্যায়ক্রমে আমরা এগুলো চালু করব। এটা ভালো একটা ডিভাইস, মৌখিকভাবে ঝগড়াঝাটি করার চেয়ে এটা দিয়ে রাখলে রিকশা আর যেতে পারবে না। এগুলো স্থাপনের পর যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। আপাতত ডিএসসিসির পক্ষ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রাফিক রমনা বিভাগের কিছু এলাকায় বসানো হচ্ছে। এটার ভালোমন্দ দিক বিবেচনা করা হচ্ছে। এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভালো ফল আসলে এই ডিভাইস ডিএনসিসির এলাকায়ও বসানো হবে। এছাড়া ঢাকার যেসব রাস্তায় বাস চলাচল করে সেসব রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে আমরা তৎপর।