টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা গ্রামে ৮৩ বছর যাবত পবিত্র ঈদের দিন বিকেলে ঈদ আনন্দকে আর একটু বাড়িয়ে নিতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সাথে গ্রামীণ হাড়ি ভাঙা, বালিশ খেলা, সাইকেল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় স্থানীয়সহ আশপাশের হাজারো মানুষের ঢল নামে। এ সময় মিলন মেলায় পরিণত হয়। সোমবার বিকেলে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের চিলাবাড়ি স্কুল মাঠে এসব প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল। প্রধান আলোচক ছিলেন, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রৌফ। সানজিদা করিম, কুরআন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সদর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হাদিউজ্জামান সোহেল, সহ-সভাপতি মামুন সরকার, জেলা তাঁতী দলের সাবেক আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক রাকিব হোসেন, সদর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আব্দুর রাজ্জাক।
৮৩ বছর ধরে ঈদুল ফিতরের প্রথম দিনে দাইন্যা ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দাইন্যা সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এই ঐতিহ্যবাহী এই ঘোড়দৌড় ও গ্রামীণ বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতা এবং মেলার আয়োজন করে আসছে। প্রতিযোগিতার মূল আকর্ষণ ছিলো ঘোড়দৌড়। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন নানা বয়সী মানুষ। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে স্কুল মাঠ। ঘৌড়া দৌড় ছাড়াও গ্রামীণ হাড়ি ভাঙা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মেয়েদের বালিশ খেলা এবং ছেলেদের সাইকেল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অনেকেই বাড়ির ছাদের উপরে বসে ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত এমন প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। এসব প্রতিযোগিতা উপলক্ষে স্কুল মাঠের আঙ্গিনায় মেলাও বসে। বিনোদনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিতে নাগরদোলা ও চকরাসহ শিশুদের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম রাইডের ব্যবস্থা ছিলো। মেলায় হরেক রকমের পণ্য নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা।
দাইন্যা গ্রামের দর্শনার্থী ছকিনা বেগম বলেন, ঈদের দিন এমন আয়োজন বিনোদনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে আমরা সবাই মুগ্ধ। পরিবার পরিজন দিনে আমরা প্রতি বছরই এই প্রতিযোগতা উপভোগ করে আসছি। আমরা শিশুকাল থেকেই এই প্রতিযোগিতা দেখে আসছি এখন আমাদের ছেলে মেয়ে ও নাতিনরাও উপভোগ করছে।
৬৫ বছরের বৃদ্ধ আজিজুল ইসলাম বলেন, ছোট বেলা থেকেই ঘোড়া দৌড়সহ বিভিন্ন খেলা দেখে আসছি। মুরব্বীসহ সকল বয়সের মানুষ উপভোগ করছি।
সানজিদা ও আফরিন নামের দুই শিশু বলেন, বাবা মায়ের সাথে ঘৌড়া দৌড়সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা দেখেছি। এতে আমাদের অনেক ভালো লেগেছে।
হোয়াইট ম্যান বলে খ্যাত হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বিনোদনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে গ্রামীন এসব প্রতিযোগতা। ছোট ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ নারী পুরুষ এই প্রতিযোগিতা দেখতে আসেন এবং সারা বছর এই মেলার অপেক্ষায় থাকেন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও যাতে এমন আয়োজন দেখতে পারে, সেজন্য এই ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলার আয়োজন যাতে নিয়মিত হয় সেদিকেও গ্রামবাসী চিন্ত চেতনা ধারণ করেন।
এ ব্যাপারে সানজিদা করিম কুরআন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা রেজাউল করিম বলেন, ৮৩ বারের মতো এমন আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের পূর্ব পুরুষরা এমন আয়োজন করেছেন, এর ধারাবাহিতায় আমরাও এ ধরনের আয়োজন নিয়মিত করে আসছি। এ ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকবে।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, ঈদের আনন্দের মাত্রা আরো বাড়াতে এমন আয়োজন প্রসংসনীয়। আশা করছি এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ