মিয়ানমারে যে প্রচণ্ড ভূমিকম্প হয়েছে, তার বিধ্বংসী শক্তি ছিল ৩৩৪টি পরমাণু বোমার সমান। আমেরিকার ভূতত্ত্ববিদ জেস ফনিক্স সিএনএনকে জানিয়েছেন এ তথ্য। সিএনএনকে ফনিক্স বলেন, ‘মিয়ানমারের ভূমিকম্প যে পরিমাণ শক্তি নির্গত করেছে, তা প্রায় ৩৩৪টি পরমাণু বোমার সমান।’ আগামী আরও অন্তত দুই মাস মিয়ানমার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকবে বলে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন এ ভূতত্ত্ববিদ। তিনি বলেছেন, ‘ইন্ডিয়ান টেকটোনিক প্লেট এবং ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের ওপর মিয়ানমারের অবস্থান। এ দুটি প্লেটের স্থানান্তরের কারণেই ভূমিকম্প হয়েছে। এ স্থানান্তর আরও দুই মাস পর্যন্ত চলবে। এ কারণে আগামী দুই মাস ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকবে মিয়ানমার।’
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শহর মান্দালয় থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্র বা এপি সেন্টার। ইউএসজিএস জানিয়েছে, মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ এবং ৬ দশমিক ৪ মাত্রার দুটি ভূমিকম্প হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপ থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ২ হাজার ৩৭৬ জনকে। এ ছাড়া ৩০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। ব্যাপক এ ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়েছে মিয়ানমারের প্রতিবেশী থাইল্যান্ড, দক্ষিণপশ্চিম চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশেও। এ ৭ দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে থাইল্যান্ডের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। রাজধানী ব্যাংককে কয়েকটি বহুতল ভবন ধসে পড়ায় এখনো নিখোঁজ আছেন শতাধিক মানুষ। এ ছাড়া দেশটিতে এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ১০ জনের লাশ। এরা সবাই ভূমিকম্পে ভবন ধসে মারা গেছেন। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেইপিদো, সাগাইং, মান্দালয়, ম্যাগওয়ে, বাগো ও পূর্ব শান- এ ছয় প্রদেশ ও অঞ্চলে ইতোমধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সামরিক সরকার। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শক্তিশালী কম্পনে নেইপিদো, সাগাইং, মান্দালয়সহ পাঁচটি শহরে ভবন ধসে পড়েছে। এ ছাড়া একটি সেতু ও একটি রেলসেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ইরাবতী নদীর ওপর আভা সেতু ধসে পড়েছে। সেতুটি ভেঙে পানির মধ্যে হেলে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে ‘সব দেশ’কে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মিয়ানমারের এ আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় শোক প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের জনগণের পাশে দাঁড়াতে এরই মধ্যে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দল কার্যক্রম শুরু করেছে। এদিকে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো। তিনি দক্ষিণপূর্ব এশীয় প্রতিবেশী দেশ দুটিকে সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছেন। -এএফপি
বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে। খবরে বলা হয়, শুক্রবার রাতে প্রাবোও সুবিয়ান্তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘এই কঠিন সময়ে আমাদের চিন্তাধারা ও প্রার্থনা উভয় দেশের জনগণের সঙ্গে রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় প্রয়োজনীয় সব সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত।’ শুক্রবার মধ্য মিয়ানমারের সাগাইং শহরের উত্তরপশ্চিমে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। কয়েক মিনিট পরেই ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়।
ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো পুরোপুরি প্রকাশিত না হলেও গৃহযুদ্ধের কবলে থাকা মিয়ানমারের জান্তা সরকার বৈদেশিক সাহায্যের বিরল আবেদন জানিয়েছে। ভূমিকম্পের আঘাতে মিয়ানমারের নিহতদের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৪০০ জন। অপরদিকে থাইল্যান্ডে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।