ঈদের দিনে দেশের ৮ জেলায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
সবকটি দুর্ঘটনাই আজ সোমবার বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
চট্টগ্রাম :
সোমবার সকাল ৭টার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ছয়জন।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, লোহাগাড়ার জাঙ্গালিয়া মাজার গেট এলাকায় একটি বাসের সঙ্গে একটি মিনিবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পাঁচজন নিহত হন। মিনিবাসটি কক্সবাজারের দিক থেকে লোহাগাড়ায় যাচ্ছিল। আর বাসটি কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছিল।
নিহতরা হলেন- লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের আধার মানিক এলাকার মো. আলমের ছেলে রিফাত হোসেন (১৯), একই এলাকার সোনা মিয়ার ছেলে আরফাত হোসেন (২১), একই ইউনিয়নের চকোরিয়া পাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে নাজিম উদ্দিন (২৫), একই উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ি মৌলভী পাড়ার আমির হোসেনের ছেলে জিসান হোসেন (২২) ও সাতকানিয়া উপজেলার ডেলিপাড়া এলাকার মো. সাত্তারের ছেলে মো. সিদ্দিক (২০)।
বগুড়া :
বগুড়ার শেরপুরে পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুইজন।
স্থানীয়রা জানান, মোটরসাইকেলে চড়ে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিন বন্ধু। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের ঝুপুনিয়া সেতুর মোড়ে তাদের মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে একটি গাছে ধাক্কা লাগে। এতে গুরুতর আহত হন উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের হিন্দু পানিসাড়া গ্রামের অলোক সরকার (২০), জয়ন্ত সরকার (২০) ও শুভ সরকার (১৯)।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অলোক সরকারকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত জয়ন্ত সরকারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুভ সরকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর দেড় ঘণ্টার পর দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর উপজেলার মহিপুর জামতলা এলাকায় আরেকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
সেখানে ঢাকাগামী একটি বাস বাইকে থাকা শরিফুল ইসলাম (৩২) ও তার তিন বছর বয়সী মেয়ে সেজদাকে চাপা দিয়ে দুজনই গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়া দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়কের মহিপুর ফায়ার সার্ভিসের সামনে ঢাকাগামী একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাইভেটকারের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং গাড়ির দুই আরোহী মো. লিখন (২৮) ও মো. জীবন (৩০) আহত হন। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।
গাজীপুর :
সকাল ১০টার দিকে গাজীপুরের শিববাড়ি এলাকায় বাসের সঙ্গে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এক নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অটোরিকশা চালকসহ চার যাত্রী। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি আটক করে আগুন ধরিয়ে দিলে মুহূর্তেই সেটি পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নেভায়।
সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, সকালে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে একটি অটোরিকশা গাজীপুর শহরের দিকে যাচ্ছিল। যানটি গাজীপুর শহরের শিববাড়ি মোড়ে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাস অটোটিকে চাপা দেয়। এ সময় সেখানে থাকা শিশু তাবাসসুম (৫) ও তার ফুফু ঘটনাস্থলেই মারা যান।
স্থানীয়রা অটোরিকশা চালক ও অপর যাত্রীদের উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি আটক করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়।
নওগাঁ:
নওগাঁর সাপাহারে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় শাহিন আলম (১৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দু’জন। বেলা ১১টার দিকে উপজেলার কালাইবাড়ী-দিঘিরহাট আঞ্চলিক সড়কের মিরাপাড়া নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শাহিন আলম (১৭) পোরশা উপজেলার পশ্চিম হরিপুর গ্রামের মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ছেলে। আহতরা হলেন - সাপাহার উপজেলার আলাদীপুর গ্রামের তাহিরের ছেলে আহসান আলী (১৭) এবং জামিরুল (১৭)। জামিরুল পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল গ্রামের মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে।
জানা যায়, তিন বন্ধু মিলে ঈদে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন। অতিরিক্ত গতির কারণে মোটরসাইকেলটি মিরাপাড়া নামক স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলে শহিন আলম নিহত হন। আহত হন অন্য দুইজন। তাদের সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আহসান আলীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সাপাহার থানার ওসি আব্দুল আজিজ বলেন, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
পিরোজপুর :
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে মোটরসাইকেলে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মহিউদ্দিন তুহিন নামে এক যুবক। আহত হয়েছেন তার স্ত্রী মিম আক্তার। দুপুর ২টার দিকে উপজেলার ইন্দুরকানী-চন্ডিপুর সড়কের ফকির বাড়ি জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মহিউদ্দিন তুহিন ইন্দরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, দুপুরে মহিউদ্দিন তুহিন ও তার স্ত্রী মিম আক্তার মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে বের হন। উপজেলার চন্ডিপুর ও ইন্দুরকানী সড়কের ফকির বাড়ি জামে মসজিদ এলাকায় সড়কের বাক ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে সড়ক বাতির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে তুহিন ও তার স্ত্রী সড়কে পড়ে যান। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তুহিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
ইন্দুরকানী থানার ওসি মারুফ হোসেন বলেন, নিহতের স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ নিয়ে যেতে আবেদন করেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
সোমবার বিকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় হোটেলের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের একজন কিশোরগঞ্জ জেলার দ্বীন ইসলাম। তবে অপর নিহত সিএনজি অটোরিক্সা চালকের নাম পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। আহতরা হলেন, আশুগঞ্জের সোহাগপুর গ্রামের মো: সৈয়দ হোসেনের ছেলে সৈয়দ তাজবীর (১৭) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের জুয়েল মিয়ার ছেলে মো. নোবেল (১৭)। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে ভাঙচুর চালায়।
কিশোরগঞ্জ :
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকালে উপজেলার আগরপুর-পোড়াদিয়া সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহত শামীম মিয়া (২৫) কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া নামাকান্দা গ্রামের কৃষক নোহাজ উদ্দিনের ছেলে এবং আল আমিন (২৭) লক্ষ্মীপুর কাছারীপাড়া গ্রামের কৃষক তারা মিয়ার ছেলে। তারা দু'জনই পেশায় কাঠমিস্ত্রী ছিলেন।
মেহেরপুর :
মেহেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। সোমবার বিকালের দিকে মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠে আহমদ আলী টেকনিক্যাল কলেজের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন আল ইমরান, আখতারুজ্জামান ও শিশু জুবায়ের হোসেন। নিহত আখতারুজ্জামান এবং আল ইমরান দুই বন্ধু। তারা একই মোটরসাইকেলে আমঝুপি যাচ্ছিলেন। আল ইমরান মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়ি বাঁকা গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে। নিহত জুবায়ের মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা ধানখোলা গ্রামের আলী হাসানের ছেলে।
সোমবার বিকালের দিকে মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠে আহমদ আলী টেকনিক্যাল কলেজের সামনে এ দুর্ঘটনায় জুবায়ের হোসেনসহ চারজন আহত হন। কর্তব্যরত চিকিৎসক জুবায়ের হোসেনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং আল ইমরানকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। রাজশাহী যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী হাসপাতালে জুবায়ের হোসেনের মৃত্যু হয়, আল ইমরানকে কুষ্টিয়া হাসপাতাল নেওয়ার পরপরই তার মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, সাজ্জাদ হোসেন পলাশ নামের এক ব্যক্তি একটি জিপ গাড়ি চালিয়ে মেহেরপুরের দিকে আসছিলেন। একই সময়ে আলী আসান নামের এক ব্যক্তি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্যান চালিয়ে আমঝুপির দিকে যাওয়ার পথে আহমদ আলী টেকনিক্যাল কলেজের সামনে জিপ গাড়িটি ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। ভ্যানচালকসহ যাত্রীরা সকলের রাস্তার পাশে ছিটকে পড়েন। ওই সময় আখতারুজ্জামান ও তার বন্ধু আল ইমরান মেহেরপুর একটি মোটরসাইকেল চালিয়ে ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় জিপ গাড়িটি মোটরসাইকেলও ধাক্কা মারে। মোটরসাইকেল চালকসহ আরোহী দুইজন রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ