বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) অধীন নাটোর জেলায় একটি সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অতিরিক্ত ৮ কোটি টাকার কাজ হয়েছে শুধু কোটেশনে। দরপত্র আহ্বান না করেই ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ১৭টি কাজ। বিএমডিএ সূত্র জানায়, নাটোর এলাকায় ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নাটোর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পে ১৭৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫২ হাজার টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের এপ্রিলে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট মেয়াদে প্রকল্পটি শেষ করতে না পারায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সেইসঙ্গে ব্যয় বৃদ্ধি করা হয় ৮ কোটি টাকা। সরকার অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়। কিন্তু সেই ৮ কোটি টাকার কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। পুরো টাকার কাজ করা হচ্ছে কোটেশনের মাধ্যমে।
প্রকল্পের মধ্যে থাকা কাজগুলো দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচিত করে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ওই প্রকল্পে তা করা হয়নি। কোটেশনের মাধ্যমে ৮ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে পছন্দের ঠিকাদারকে। ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশন নামের প্রতিষ্ঠানকে প্রতিটি ১০ লাখ টাকা করে ৬টি কোটেশনে কাজ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন দরপত্রে প্রতিষ্ঠানটি আরও ১০টি কাজ পায়। কাজ শেষ হওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠানটিকে পুনঃদরপত্র ছাড়ায় নির্ধারিত দরের চেয়ে শতকরা ১৫ ভাগ ব্যয় বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নতুনবাজার এলাকায় হাইড্রোলিক ড্যাম নির্মাণের কাজ এখনো চলছে। কাজটি পেয়েছে সুপার স্টার, মো. মসলেম উদ্দিন, মৌ ট্রেডার্স, মণ্ডল এন্টারপ্রাইজ, ঈশা এন্টারপ্রাইজ নামে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। কাগজপত্রে ড্যাম নির্মাণ শেষ দেখানো হলেও মাঠের চিত্র ভিন্ন। ওই ড্যাম নির্মাণের কাজ এখনো চলছে। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর তারিখ দিয়ে ঠিকাদারদের নামে চেক ইস্যু করেছেন প্রকল্প পরিচালক। তবে বিএমডিএর হিসাব বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে তারা চেকগুলো পেয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার জানান, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ দেখানো হয়েছে। ফলে টাকা খরচও দেখানো হয়েছে। এখন পেছনের তারিখ দিয়ে চেকগুলো ইস্যু করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) সুমন্ত কুমার বসাক জানান, দরপত্র ও কোটেশন দুইভাবেই কাজ করা হয়েছে। সব কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এ সময় ৮ কোটি টাকার কোটেশন নিয়মে পড়ে কি না বা বড়াইগ্রামের কাজ এখনো চলছে জানালে তিনি বলেন, ‘টেন্ডারেও কাজ হয়েছে, কোটেশনেও কাজ হয়েছে। আরও কিছু হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আপনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন।’