দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, ব্রিটিশ এমপি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী পলাতক শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দালিলিক প্রমাণ রয়েছে দুদকের কাছে। দুদকের বিরুদ্ধে জবাব না দেওয়ার যে অভিযোগ এনেছেন টিউলিপ সিদ্দিক, তা সঠিক নয়।
গতকাল বেলা আড়াইটায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় অভিযুক্ত টিউলিপ সিদ্দিকের বিলেতি আইনজীবীর পাঠানো পত্রের জবাব আমরা দেইনি। দুর্নীতি দমন কমিশন
তার সঙ্গেও যোগাযোগ করেনি। তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিতে পারেননি বলেই ব্রিটেনের মন্ত্রী পদ থেকে টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন তার আইনজীবীকে এবং আইনজীবীর মাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিককে জানিয়েছে, সম্পূর্ণভাবে দালিলিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই আদালতে দুর্নীতির চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আদালতে হাজির হয়ে তারা সেই অভিযোগের মোকাবিলা করেন। এটি কম্পাউন্ডেবল কোনো মামলা নয়, চিঠি লেখালেখি করে মামলার পরিণতি নির্ধারিত হবে না। আদালতেই তা নির্ধারিত হবে। আদালতে তার অনুপস্থিতি অপরাধমূলক পলায়ন বলে বিবেচিত হবে। কেবল টিউলিপ সিদ্দিক নন, দুর্নীতির প্রশ্নে সাবেক প্রধানমন্ত্রী পলাতক শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে যে কোনো সাধারণ নাগরিকের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে থাকে।
ড. আবদুল মোমেন বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ইন্টারপোলসহ অন্য যেসব প্রক্রিয়া আছে, সেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পলাতক শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদক হচ্ছে প্রসিকিউটর। অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু আমরা করি না। এটা আদালতের কাজ। তিনি বলেন-
আমার কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা দুর্নীতিগ্রস্ত একজন সাধারণ জনগণের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত একটিমাত্র মামলায় কিছু টাকা ফেরত এসেছে। সে টাকা আনতে যে ব্যয় হয়েছে, তা খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনাটা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি অন্তত কিছু অংশ হলেও যাতে ফেরত আনতে পারি। আর যে ১১টা প্রতিষ্ঠান নিয়ে টাস্কফোর্স হয়েছে, এমন আরও ৩০টা প্রতিষ্ঠান আছে। যাদের অভিযোগগুলো প্রায় কাছাকাছি। আমরা সব নিয়েই কাজ করছি। ক্রিকেটার সাকিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে : দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে আমাদের অনুসন্ধান চলছে। আমরা আশঙ্কা করছি, তিনি দুদকের আসামিও হতে পারেন। তবে বিষয়টি এখনো অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে, অনুসন্ধানের পরে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে। জানা গেছে, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ২০১৮ সালে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে দুদকের চুক্তি হয়। এ ছাড়া হটলাইন-১০৬ উদ্বোধনকালেও তার সঙ্গে কাজ করে দুদক। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ২০২২ সালে সাকিবকে আর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর না রাখার কথা জানায় দুদক। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার ও সাবেক এমপি সাকিব আল হাসানের নানান অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গত বছরের ২৮ আগস্ট দুদকে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিলহানুর রহমান নাওমী। আবেদনে সাকিবের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, নিষিদ্ধ জুয়ার ব্যবসা ও জুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, সোনা চোরাচালানে সম্পৃক্ততা, প্রতারণার মাধ্যমে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের অর্থ আত্মসাৎ, ক্রিকেট খেলায় দুর্নীতি ও নির্বাচনি হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। গত বছরের ৮ নভেম্বর সাকিব আল হাসানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ ছাড়া গত বছরের ৫ আগস্ট আদাবরে পোশাক কারখানার কর্মী রুবেল হত্যার ঘটনায় তার বাবা রফিকুল ইসলামের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অনেকের সঙ্গে সাকিবকেও আসামি করা হয়। এরপর হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় জাতীয় দল থেকে বাদ দিয়ে মামলার তদন্তের স্বার্থে সাকিবকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বিসিবিকে আইনি নোটিস পাঠান এক আইনজীবী।