ব্যথা কোন রোগ নয়, ব্যথা বিভিন্ন লক্ষণ মাত্র। ব্যথা হচ্ছে এক প্রকার অনুভুতি যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি আমাদের শরীরের কোন একটি অংশ স্বভাবিক ভাবে কাজ করছে না। ব্যথা মানব শরীরের বিভিন্ন অংশ হতে পারে। যেমন জোড়া সমুহে ও মাংশপেশীতে। তবে জোড়ার ব্যথায় মানুষ বেশী আক্রান্ত হয়। এসব জোড়ার ব্যথার মধ্যে হাটুর ব্যথা বয়স্ক লোকদের মধ্যে বেশী দেখা যায়।
বয়স হলে হাটুর ব্যথা নিত্য সঙ্গী হয়ে দাড়ায়। আর এ বয়সে কাউকে না পেলে একাই চলতে হয় নি এই একা চলার পথকে ধরেই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে। এই একলা চলার পথের সঙ্গী হচ্ছে আমাদের হাটু। হাটা ছাড়া আমরা এক স্থান হতে অন্য স্থানে যেতে পারি না। ব্যাথা সব সয়সেই হয়, তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে হয়, যাকে ইংরেজীকে বলা হয় যে অস্টিও-আথ্রাইটিজ।
কি কি সমস্যা হতে পারেঃ
১. বসা হতে উঠতে কস্ট বোধ করা
২. বেশীক্ষন হাটতে না পারা
৩. নামাজ পড়তে গিয়ে, হাটু যখন তখন টন টন করে
৪. কখনও কখনও হাটুতে শব্দ হয়
৫. হাটু নড়া চড়া করলে বা ভাজ করলে কষ্ট বাড়ে
৬. তীব্র ব্যথা হলে ফুলে যায় বা লাল হয়ে যায়
এমন ব্যথার কারনঃ
১. আঘাতের কারনে হাটুতে ব্যথা হতে পারে
২. লিগামেন্ট বা মিনিসকাস এর ইনজুরির কারনে হাটুতে ব্যথা হতে পারে
৩. খেলাধুলা বা দাড়ানোর সময় হঠাৎ পড়ে গিয়ে হাটু মচকে গিয়ে ব্যাথা হতে পারে
৪. বারসা বা টেনডনের আঘাতের কারনে হাটুতে ব্যথা হতে পারে
৫. লিগামেন্ট ইনজুরির কারনে হাটুতে ব্যথা হতে পারে
হাটু মজবুত রাখার উপায়ঃ
হাড়ের মূল উপাদান আমিষ কোজেন এবং ক্যালিসিয়াম। প্রাকৃতিক নিয়মেই ৩০ বছরের পর হতে হাড়ের ঘনত্ব ও পরিমান কমতে থাকে। হাটু দুর্বল ও ভঙ্গুর ও হতে থাকে। ৫০ হতে ৬০ বছরের দিকে হাড় অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। এজন্য হাড়কে মজবুত রাখতে হলে আমিষ কোলাজেন ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে কবে।
হাটুর ব্যথা প্রতিরোধের উপায়ঃ
১. হাটু ভাজ করে বেশীক্ষন বসে কাজ করবেন না।
২. অতিরিক্ত ওজন পরিহার করুন এবং স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখুন
৩. এক জায়গায় বেশীক্ষন দাড়িয়ে থাকবেন না
৪. ভারী বস্তা বহন করবেন না
৫. হাই কমোড ব্যবহার করুন
৬. চেয়ারে বসে কাজ করুন
৭. সিড়ি দিয়ে উঠে নামা করার সময় সিড়ির রেলিং ব্যবহার করুন
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাঃ
হাটুর ব্যথার চিকিৎসা করে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্বভ নয়, কিছুটা কমে এ কথাটি ঠিক নয়। কারন সমস্যা সঠিক ভাবে নিরুপন করে, সঠিক চিকিৎসা দিলে অবশ্যই ভালো হবে। ব্যথা যখন খুব বেশী হয়, তখন অনেকেই ব্যথা নাশক ঔষধ, মালিশ ও গরম সেক দিয়ে ব্যথা কিছুটা কমায়, কারন তারা না বুঝে নিজেদের চিকিৎসা নিজেরাই করে। এভাবে চলে দীর্ঘ দিন।
যখন এগুলোও কাজ করে না, তখন ব্যথা তাদের জীবনের নিত্তসঙ্গী হয়ে যায়। কিন্তু যদি প্রথম পর্যায়ে এসকল রোগীরা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিত এবং নিয়ম কানুন মেনে চলত, তাহলে এ রোগের পরিপূর্ণ চিকিৎসা করা সম্ভব এবং অস্টিও আথ্রাইটিজ নামক রোগটিও হতো না।
এ রোগটি পরিপূর্ণ কন্ট্রোলে রাখা যেত। ফলে এ রোগটি হতে তাকে পরিপূর্ণ সুস্থ্য করা যেত। জীবন অনেক সুন্দর। আর সুন্দর ভাবে বাচতে বা ব্যথামুক্ত ভাবে জীবন যাপন করতে হলে এ অবস্থায় দৈনন্দিন জীবন যাপনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। সঠিক ও মান সম্মত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে।
লেখক : বাত-ব্যথা, আথ্রাইটিজ, প্যারালাইসিস ও ব্যাক পেইন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১ শাখা,ঢাকা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ