বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে হামলা, ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ঢাকার কোতয়ালী থানায় দায়ের করা মামলায় ঢাকা আইনজীবী সমিতির ৬১ আওয়ামীপন্থী আইনজীবীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া একই মামলায় ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগরসহ ১৯ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। অপরদিকে সুপ্রীম কোর্টে ২০২৩ সালে নির্বাচনের সময় হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানার মামলায় আট আইনজীবী আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
আজ রবিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালতে তারা আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান মানিকসহ ৬১ জনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এছাড়া বয়স্ক বিবেচনায় ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগরের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। মহিলা বিবেচনায় আইনজীবী আফরোজা ফারহানা অরেঞ্জ, সাহেলা আক্তার শিল্পী, সালমা হাই টুনি, শারমিন সুলতানা হ্যাপী ও সুলতানা রাজিয়া রুমাসহ ১৮ জনের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
কারাগারে যাওয়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান মানিক, গাজী শাহ আলম, ঢাকা বারের সাবেক অফিস সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, গোলাম কিবরিয়া সুমন, সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক উজ্জল মিয়া ও সাইবার ট্রাইব্যুনালের সাবেক পিপি নজরুল ইসলাম শামিম।
অপরদিকে, সুপ্রীম কোর্টে ২০২৩ সালে নিবার্চনের সময় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় শাহবাগ থানার মামলায় আট আইনজীবী আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এ দুই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে সকল আসামি ৮ সপ্তাহের জামিনে ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আজ তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।
৬১ আইনজীবী কারাগারে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ পুলিশের উপ-পরিদর্শক রিপন মিয়া। অপরদিকে দুই মামলায় ২৭ জন জামিনের বিষয়টি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
কোতয়ালী থানার মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বেলা ১২টার দিকে আসামিরা ঢাকা আইনজীবী সমিতির সম্মুখ থেকে বেআইনি জনতাবদ্ধে অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে "শেখ হাসিনার ভয় নাই", "রাজপথ ছাড়ি নাই" বলে স্লোগান দিতে থাকে। এসময় ভুক্তভোগী আইনজীবী মামলা শুনানি শেষে করে ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে আসেন। তখন আসামি আনোয়ার শাহাদাৎ শাওন হেলমেট পরে পিস্তল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি তাক করে। আসামি ওয়াকিল লোহার রড দিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন।
এছাড়া অন্য আসামিরা স্লোগান দিয়ে বাদীসহ অন্য আইনজীবীদের কিলঘুষি মারে এবং লোহার রড ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারাত্মক আঘাত করে। আসামিরা বিএনপিপন্থী আইনজীবীগণের চেম্বার ভাঙচুর ও লাখ লাখ টাকার মূল্যে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। আসামিরা আশেপাশের আইনজীবীদের প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। আসামিরা ঢাকা আইনজীবী সমিতির চেম্বার ভবন ও ভবনের গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এক কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেন।
এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু বাদী হয়ে এ মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে কোতোয়ালী থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত