দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর বিশ্ব মুসলিম আল্লাহর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ যে আনন্দ উৎসব পালন করেন, ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় তা ঈদুল ফিতর হিসেবে পরিচিত। আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের জন্য দুটি দিন ঈদ হিসেবে প্রবর্তন করেছেন। সাহাবি আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) মদিনা গমনের পর দেখলেন তারা দুই দিন বিভিন্ন উৎসব পালন করে। রসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের বললেন, ‘আল্লাহতায়ালা এর পরিবর্তে তোমাদের জন্য দুটি দিন ধার্য করেছেন, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার দিন।’ (তিরমিজি) । ঈদের দিন দুই রাকআত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের নামাজ ও অন্য নামাজের ব্যবধান হলো- এতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির দিতে হয়, যা সহিহ হাদিস, সাহাবাদের বিশুদ্ধ আমল, ফতোয়া এবং ইজমার মাধ্যমে প্রমাণিত। প্রথম রাকআতে নামাজ শুরু করার সময় তাকবিরে তাহরিমার পর ঈদের নামাজের অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলতে হবে। প্রথম রাকআত সমাপ্ত করে দ্বিতীয় রাকআতে কেরাআত শেষ করার পর ঈদের নামাজের অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলতে হবে। অতঃপর রুকুর জন্য তাকবির বলে রুকুতে যাবে। (তাহাবি, আবু দাউদ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, মুসনাদে আহমদ)। চন্দ্র মাস ২৯ অথবা ৩০ দিন হয়। ঈদ কোন দিন হবে তা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করবে। সমগ্র বিশ্বের মুসলমানরা তাদের নিজস্ব অঞ্চলে চাঁদ দেখে রমজানের রোজা শুরু করবেন। এরই ভিত্তিতে তারা ঈদ উদযাপন করবেন। এ নিয়মেই চাঁদনির্ভর আমলগুলো পালন করতে হবে। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ঈদ উদ্যাপন করো।’ (বুখারি, মুসলিম)। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘সিরিয়ার চাঁদ দেখা মদিনাবাসীদের জন্য যথেষ্ট নয়। রসুলুল্লাহ (সা.) এভাবেই আমাদের নির্দেশ করেছেন।’ (মুসলিম)। ‘আরব দেশের নির্ভরযোগ্য ফাতওয়ার কিতাব, ফাতওয়ায়ে উলামায়ে বালাদিল হারাম’-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যেসব অঞ্চলে একই সময়ে চাঁদ দেখা সম্ভব ওইসব অঞ্চলের কেউ চাঁদ দেখলে ওই অঞ্চলের অন্যরা এর ওপর নির্ভর করে আমল করবেন। আর যেসব অঞ্চলে চাঁদ উদয়ের সময় এক হয় না, বরং প্রতিটি অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বা আগে পরে চাঁদ উদয় হয়ে থাকে ওইসব অঞ্চলের কোথাও চাঁদ দেখে থাকলে অন্য কোনো অঞ্চলে চাঁদ দেখেছে বা দেখার আদৌ সম্ভাবনা আছে কিছুই বলা যাবে না।’ (পৃ. ২৮৫)। আন্তর্জাতিক সমন্বয় বোর্ড সৌদি আরব এবং আরব অনারবের বিশ্ববরেণ্য ওলামায়ে কেরাম বহুবার এ সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছেন। ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ। ঈদুল ফিতরের দিন খেজুর বা কিছু আহার করে গোসল করে তাকবির বলা অবস্থায় ঈদের নামাজের জন্য যাওয়া সুন্নত।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।