দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। টানা নয় দিনের লম্বা ছুটি। অর্ধেকের বেশি লোক গ্রামের টানে ঢাকা ছাড়বেন। তবে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। বরাবরের মতোই ফাঁকা নগরীতে অপরাধীদের তৎপরতার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তাব্যবস্থা বারবার ঢেলে সাজাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এখনো পুরোদমে স্বাভাবিক হতে না পারায় উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। তবে নিরাপত্তা রক্ষায় সেনা, নৌ এবং বিমান- তিন বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে কিছুটা নির্ভার সরকারের শীর্ষ মহল। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অপরাধীদের ঠেকাতে সাদা পোশাকে এবং ভার্চুয়ালি নজরদারি বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, প্রতি বছরই ঈদের আগে এবং পরে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মলম ও অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে যায়। সক্রিয় হয়ে উঠে চাঁদাবাজসহ বিভিন্ন অপরাধী চক্র। অফিস, ফ্ল্যাট ও বাসা ফাঁকা রেখে যাওয়া এবং ঢাকা ফাঁকা থাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। অনেকটা একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয় বিভাগীয় এবং জেলা শহরগুলোতেও। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কন্ট্রোল রুম, থানা কিংবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সহযোগিতা নিতেও নাগরিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সূত্র বলছে, পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার বিপুল সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। থাকবে কয়েক স্তরের বাড়তি নিরাপত্তা। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে। থাকবে চেকপোস্ট। সন্দেহভাজন ব্যক্তি, গাড়ি, ব্যাগ মেটাল ডিটেকটর, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও ম্যানুয়াল চেকিংয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে।
উদ্বেগের এ সময়ে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদর দপ্তর, ডিএমপি ও র্যাব প্রধানের বিশেষ নির্দেশনা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পুলিশ থাকলেও ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, আমাদের ব্যবস্থাপনাটা আমরা করব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে রাতের বেলায় সব বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন বাস, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরান ঢাকা ছাড়াও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার জুয়েলারি মার্কেটে পুলিশের কড়া নজরদারি রয়েছে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ফোর্স রাখা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, আড়তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে স্পর্শকাতর স্থান, সড়ক, স্থাপনা, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ডাকাত, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টিদের ধরতে পুলিশ ও র্যাবের বিশেষ টিম মাঠে রয়েছে। ঈদে যেন কোনো অপরাধ না ঘটে সে বিষয়ে তাদের আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে। চেকপোস্ট, পেট্রোল, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পিকআপ, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে টহল থাকবে। কূটনৈতিক ও মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় নজরদারি থাকছে। গুলশান ও বারিধারার সব দূতাবাস এবং সংলগ্ন সড়কে থাকছে বাড়তি গোয়েন্দা নজরদারি। রাজধানীতে পুলিশের ৮টি বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার এবং র্যাবের ৫টি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক নিজ নিজ এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করবেন। পোশাকধারী ছাড়াও সাদা পোশাকের পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা মাঠে থাকবেন। ঢাকা মহানগরীর সব প্রবেশ ও বহির্গমন পথে বাড়তি চেকপোস্ট থাকছে। ঈদকে কেন্দ্র করে এ নিরাপত্তা বলবৎ থাকবে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথে আকস্মিক দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম, রেসকিউ বোট, ডুবুরি, অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, ঈদ কেন্দ্র করে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া অক্সিলিয়ারি ফোর্স (সহায়ক বাহিনী) এবার মার্কেট ও বিপণিবিতানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। মার্কেট ও আবাসিক এলাকাসহ রাজধানীতে পুলিশের ৬০০টি টহল ২৪ ঘণ্টা থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে প্রতিদিন ৭৫টি চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। ঈদে থানা পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএন, সিটিটিসি, ডিবিসহ ডিএমপির ১৫ হাজার পুলিশ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, জনগণ যাতে নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করতে পারেন সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ এবং পুলিশের বিশেষায়িত ইফনিটগুলো সার্বিক সমন্বয়ের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছে। সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সার্বিক বিষয় মনিটরিং করছেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, ঈদে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেকপোস্ট, টহল, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ঢাকায় ৯৯টি টহলসহ সারা দেশে ৩৫২টি টহল থাকবে। বড় বড় ঈদের জামায়াত, বিনোদন কেন্দ্রসহ ভেন্যু কেন্দ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করতে সাদা পোশাকে নজরদারি থাকবে।