চার বছর ধরে বন্ধ ঐতিহ্যবাহী জয়পুরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তন (টাউন হল)। জরাজীর্ণ টাউন হল ভবনে চলে মাদকসেবীদের আড্ডা। এক সময় এখানে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করলেও এখন সব বন্ধ। দ্রুত হলটি নতুন করে নির্মাণের দাবি জেলাবাসীর। জানা যায়, ১৯৮৪ সালে জয়পুরহাট শহরের সিও কলোনি এলাকায় নির্মাণ করা হয় জেলা পরিষদ মিলনায়তন বা টাউন হল। প্রায় চার দশক ধরে ভবনটি সংস্কার না হওয়ায় অযত্ন-অবহেলায় ধীরে ধীরে হলটি জৌলুস হারিয়ে একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২০ সালের পর এখানে আর কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়নি। পরিত্যক্ত পড়ে আছে ভবনটি। সড়কঘেঁষা সীমানাপ্রাচীরের কিছু অংশ ভেঙে ফাঁকা অবস্থায় রয়েছে। ভিতরে চেয়ার-টেবিলসহ অন্য আসবাবপত্রে ধুলার আস্তরণ পড়েছে। ফাটল ধরেছে ভবনের বিভিন্ন স্থানে। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটি পরিণত হয়েছে ভূতুড়ে বাড়ি। রাত-বিরাতে চলে মাদকসেবীদের আড্ডা। প্রায়ই চোরেরা ছোটখাটো জিনিজপত্র নিয়ে যায় এখান থেকে। সিও কলোনি এলাকার গোলাম মোরশেদ বুলবুল বলেন, এখানে আগে সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে মিটিং, সভা-সমাবেশ হতো। সবসময় থাকত জাঁকজমকপূর্ণ। বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এখানে নেশাখোরদের আসর বসে। ঘটে নানা অসামাজিক কাজও। মোস্তাফিজুর রহমান নামে একই এলাকার একজন বাসিন্দা জানান, ছোটবেলা থেকে টাউন হলে আমরা নাচ-গান, নাটকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখে এসেছি। এখন অবহেলিত ও অরক্ষিত পড়ে আছে। এখানে খারাপ ছেলেপেলে আড্ডা দেয়, নেশা করে। নাইটগার্ডও সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বাউন্ডারি ভাঙাচোরা থাকায়। আমরা চাই জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে নতুন করে এটি করা হোক। কামরুজ্জামান প্রিন্স নামে একজন বলেন, এই টাউন হলে জয়পুরহাটের অনেক ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। বর্তমান জরাজর্ণী ভবনে এটি ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। আমরা চাই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আনা হোক। পাশের দোকানি ফেরদৌস হোসেন বলেন, টাউন হল যখন চালু ছিল তখন এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হতো। এ কারণে অনেক মানুষজন আসতেন। দোকানে ভালো বিক্রি হতো। এখন বন্ধ থাকায় আর আগের মতো বিক্রি হয় না। নিরাপত্তারক্ষী জামিল হোসেন বলেন, খোলামেলা জায়গা ও বাউন্ডারি ভাঙা থাকায় অনেক চেষ্টা করেও মাদকসেবী-ছিঁচকে চোর আটকানো যায় না।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ রায়হান বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট থেকে বাউন্ডারি ওয়াল সংস্কারের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে টেন্ডার সম্পন্ন হলে বাউন্ডারি কাজ শুরু করতে পারব। এ ছাড়া যে ভবন রয়েছে সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। পরিত্যক্ত ঘোষণার পরে মাল্টিপারপাস ভবন করা হবে। যেখানে হলরুমের পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও থাকবে।